তুমি আমার কেউ নও। আমি তোমাকে চিনি না জানি না। দূর দূর অব্দি কোনও পরিচয় নেই দুজনার। আজকের আগে আমরা পরস্পরকে দেখিওনি কখনও। হয়তো এরপরও আর দেখা হবে না- যে যার মতো ভিন্ন পথে যাবো চলে। কিন্তু আমি যখন তোমার চোখের ভাষা পড়ে ফেললাম আর আমি পেলাম যে, পৃথিবীর কোনও এক গত জীবনে তুমি যেন আমারই ছিলে। জীবনের শ্রেষ্ঠ বসন্তদিন একদিন তুমিই রাঙিয়েছিলে ফুল ফল মদিরা নিবিড় চুম্বন ও সান্দ্র সান্ধ্য প্রার্থনায়- অকৃত্রিম প্রেমে হৃদ্যতায়। শুধু তুমি তুমি তুমিময় ছিল আমার নিখিল সংসার। অটল জাতিস্মর যায় বলে, সেই ছন্দবদ্ধ বিভোর জীবনে তুমিই বসন্ত এনেছিলে আমার হে অপরিচিতা। আমি তোমাতেই পূর্ণ হয়েছি, ঋদ্ধ হয়েছি। তুমি তো আমার সহস্র জনমের সাথী!
আর একটা ধূর্ত কাঠবিড়ালি দারুণ ক্ষিপ্রগতিতে বাতাসে শীষ কেটে ছুটে যেয়ে- কুশল কয়েক লাফেই তরতরিয়ে উঠে গেলো বিরাট ইউক্যালিপটাস গাছের একেবার মগডালে। বহু পথ চলা শেষে পথিক খুঁজে পেলো গন্তব্য। দারুণ তৃষিত বিমর্ষ এক শুশুক সহসা ‘জল চাই জল চাই’ বলে তারস্বরে চেঁচাতে লাগলো বুকের অনেক গভীরে। হৃদয়ের জর্জর বিরান মাঠ মুহূর্তেই ভরে উঠলো রঙবেরঙের বাঙময় ফুল ফল ও সুখী পাখিদের কল্লোলে; বৃন্তে বৃন্তে সজীব ফুলেরা উন্মীলনে ছড়ালো বিপুল সুঘ্রাণ। আহা, সে তুমিই ছিলে অপরিচিতা, তুমিই ছিলে!
কিন্তু ঠিক যখন আমি আবিষ্কার করলাম যে, তোমার ওই দুটি চোখ আসলে মাতৃক্রোড়ে সদ্যজাত ফুটফুটে শিশুর চোখের মতো দিব্য, নিষ্পাপ নিষ্কপট, রাজ্যের কৌতূহলে পূর্ণ এবং অদ্যন্ত মুক্ত- এই স্বার্থান্ধ ধূর্ত মানুষের রুক্ষতাভরা পৃথিবীর সবরকমের পার্থিব আকাঙ্ক্ষা ও অপেক্ষা থেকে। আর আমি তখন দারুণ লজ্জা ও অনুতাপে আমার চোখ নামিয়ে নিলাম। উহু, তুমি আমার কেউ নও অপরিচিতা, ছিলেও না কোনওকালে কোনওদিন কোনও পূর্ব জীবনেই।