দেখতে দেখতে দশটা বছর পার করে ফেললাম
কত রাগ অভিমান আর অগাধ ভালোবাসায় ভর করে
সত্যি বলছি, এই পথ চলা এতটাও সহজ ছিল না
পাড়া প্রতিবেশী পরিবার ছাত্রছাত্রী সবার কাছ থেকে
কোন না কোন সময় পেয়েছি নানা গঞ্জনা অপবাদ।
হ্যাঁ আমি!আমি এই সমাজের এক বেকার টিউশান মাস্টার
অভাবের সংসারের মাঝে যুদ্ধ করা এক ক্লান্ত যোদ্ধা
ক্লান্ত!তবুও যুদ্ধক্ষেত্র থেকে না পালিয়ে যাওয়া এক সৈনিক
আসেপাশে আমার মতো এমন বহু মানুষ আছে
যারা হাজারটা স্বপ্ন বুকে নিয়ে এভাবেই লড়াই রেখেছে জারি।
মাধ্যমিক, এইচ এস,গ্রাজুয়েশান,মাস্টার ডিগ্রী,বি.এড
একের পর এক ধাপ পেরিয়ে যখন আশা করেছিলাম
এবার হয়ত জীবনে একটা নতুন কিছু ঘটবে
কিন্তু হায়! সব স্বপ্ন স্বপ্নই হয়ে থেকে গেল
শুধু চলে গেল জীবন থেকে একটার পর একটা বছর।
এখন আর এ সব নিয়ে ভাবি না,
নিজের কাজ আর কর্তব্য সেই ভাবনার সময় টুকুও দেয়না,
আগে অ্যালার্ম না বাজলে ঘুম ভাঙতো না
তবে এখন তার আর দরকার পড়ে না।
যে ছেলেটা সবার পরে ঘুম থেকে উঠতো
সেই ছেলেটাই এখন সবার আগে ঘুম থেকে ওঠে,
সারাদিনে একটার পর একটা বাড়ি ঘুরে ঘুরে
সে নিজের বাড়ি ফেরে সবার শেষে,
রোদ ঝড় বৃষ্টি তার চলার পথে কখনো বাধা হয়ে উঠতে পারেনি।
তার পরেও কিছু কিছু বাড়ির মানুষ এমনও আছে
যেখানে দশ মিনিট দেরী হলেই ফোন,
মাস্টার মশাই কখন আসবেন?ওই দেরী হচ্ছে দেখে ফোন করলাম।
মাঝে মাঝে ভাবি, বাদ দিয়ে দেব
তারপর মনে পড়ে অভাবের সেই পাহাড় চূড়া লিস্টের কথা।
পরীক্ষার খাতায় বেশি নাম্বার পেলে কৃতিত্ব নিজের
আর কম পেলে সব দোষ শুধু টিউশান মাস্টারের,
টাকা পয়সার কথা নাইবা তুললাম
টাকা পয়সার জন্য তো আর পড়াই না,পড়ানোর জন্য টাকা নেই,
যে বুঝে সে বোঝে,কিন্তু কাউকে বোঝাতেও চাই না।
টিউশান মাস্টারদের জীবনটাই এই রকম
তবে সবার এমনটা নয়,
আমাদের মতো গরীব বেকার টিউশান মাস্টারের জীবনটাই এরকম
স্বপ্ন আছে স্বাদ আছে কিছু করার ইচ্ছাও আছে
কিন্তু চাকচিক্যের এই দুনিয়ায় সব আড়ালেই রয়ে যায়।
তারপরেও যখন ছেলেমেয়ে গুলোর হাসি মুখটা দেখি
সব যন্ত্রণা সব না পাওয়া এক নিমেষে কোথায় হারিয়ে যায়
তখন মনে হয় এই বেকার টিউশান মাস্টারের জীবনটাও
কম বৈচিত্রের নয়,কম আনন্দের নয়।