বৃষ্টি নামে। তাতে কি আমার?
ভিজিস কেন? অভাব জামার!
ছাতা কই তোর? ছাতা নাই ভাই।
অসুখ করলে? সুখই তো নাই!
থাকিস কই তুই? থাকি তো রাস্তায়।
করিস কি তুই? কাগজ ভরি বস্তায়।
নামটা যেন কি? জাইনা লাভ নাই।
কেন কি হইছে? ওইটা মিথ্যা ভাই।
বল তবু শুনি? মায় ডাকে রাজা!
মিথ্যা কি আছে? করতেছেন মজা?
বাবা আছে কি? জানা নাই ভাই।
কেন জানা নাই? কোনদিন দেখি নাই।
ছাতার নিচে আয়! কাজ আছে ভাই।
আরে শুনে যা? এখন সময় নাই!
এই বলে রাজা একরকম দৌড়ে চলে যেতে লাগলো। দীপুও পিছু নিলো ওর। সেদিন কালা মনাইয়ের বাড়ি যাওয়া হয় নি। কিন্তু আজ এই রাজার বাড়ি যেতে হবে। হঠাৎ ছেলেটা পেছন ফিরে তাকায়। দীপুকে দেখে হকচকিয়ে যায়।
কই যান ভাই? তোর পিছু পিছু।
বাড়ি যান ভাই। পেটে আছে কিছু?
না পুরা খালি। চল কিছু খাই।
দয়া চাই না। দয়া করি নাই।
আমার ক্ষুধা নাই। আমার তো আছে!
তয় কিছু খান? টাকা নাই কাছে!
আমি কি করুম? ধার দিবি কিছু?
দশ টেকা আছে! চল খাওয়া কিছু!
একটু বিব্রত হয় রাজা। তবে এমন আবদার কেউ তাকে কোনদিন করে নি। কিছুটা অবাক, কিছুটা হতভম্ব। যাইহোক, টং দোকান থেকে দুটো পাউ রুটি খেয়ে দুজনে এক ছাতার নিচে হাটছে। বৃষ্টি কিছুটা কমেছে বটে, তবে পুরোপুরি না। এইবার দীপু প্রশ্ন করে রাজাকে,
পকেটে আছে কিছু? কিছু নাই ভাই!
মারে কি দিবি? আমার জানা নাই।
এই নে ধর, লাগবো না ভাই!
ধার শোধ করি? এতো নেন নাই!
তুই কত দিয়েছিস? মাত্র দশ টেকা।
আমি কত দিলাম? পাঁচশ টেকা!
তোর সব দিছিলি? হ ভাই দিছিলাম।
আমারও সব দিলাম! এত কি দিছিলাম
আর কোন কথা বলতে দেয় নি দীপু রাজাকে। তার যুক্তি এই, তুই আমায় তোর পকেটের সব দিলি, সে ঋণ আমি আমার পকেটের সব দিয়েই শোধ করলাম। ওকে বলে একটা ছাতা কিনতে আর বাকি টাকায় ভালো কিছু মাকে খাওয়াতে। ছেলেটার চোখ ছলছল করছিল। কিন্তু অশ্রু গড়াতে দেয় নি। ওকে যে খুব শক্ত হতে হবে!
তৃপ্তি নিয়ে দীপু চলে আসে বাড়ি। আবার অপেক্ষায় নতুন কারও।