সেই চিঠি, লেখা আছে -
'সঞ্জীব আমি ভালো আছি,
           খুব সুখে আছি,
রিসার্চ চলছে ভালোই।
হয়তো আর বছর খানেক ....'

তুই আজ ডক্টরেট,
যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার ।

খুব কেঁদে ছিলাম একসময়ে



মনে পড়ে
একদিন
কাঁধে হাত রেখে বলেছিলি -
'আমি তো আছি'।

তুই আছিস এখনো
শুধু নেই .....
তোর মাসিমা , আমার মা।

তোকে নেমন্ত্রণ করতে গিয়েছিলাম
আমার মায়ের নিয়মভঙ্গ অনুষ্ঠানে


চিনতে পারিসনি
গেটের সামনে ধরা গলায়
দাঁড়িয়ে থাকা জীর্ণ, শীর্ণ বন্ধুটিকে!

চোখের মাথা খেয়ে আমার মা
পুরুষ কন্ঠ শুনলেই বলত -
'কে? অশোক এলি না কি রে?'

তোর মনে নেই
দুই মেয়ে ডাক্তার,
তাদের আবদার, ভালোবাসায়
ভুলে গেছিস কাঁচা আমের গন্ধ,
মোটা চাল ভাজার স্বাদ।
আমার ঘুঁটে কুড়ানি মা-
ঘুঁটে বেঁচে যা দিত
অর্ধেকটা পেতিস তুই।
মা এও বলতো -
'এই পাকা আমটা অশোকের'।

1971 সাল। চলছে মুক্তিযুদ্ধ।
বোম বাঁধায় পারদর্শী হয়ে উঠেছিলি ক্রমে।
সেদিন তোকে বাঁচিয়ে ছিলাম
তোর অন্য পাঁচ বন্ধু চলে গেছে
খড়ের চাল উড়ে।
আর তুই আজ লেকচারার ।

ঘরের চাল বিক্রি করে
  জুয়া খেলতিস-
সিনেমা দেখতিস,
জুতো পেটা করতিস বাবাকে।
তখনও বন্ধু হসনি আমার ।
আজ বন্ধু লেকচারার!

মা মৃত্যু শয্যায়,
বুকে বেকারত্ব জ্বালা ।
বোম বাঁধতে শিখিনি ,
তাই হাতে অস্ত্র নিতে পারিনা ।
মা শুধু ঘড়ির এলামের মতো
বলে উঠতো-
'কে?অশোক?ফিরলি না কি রে?'
অস্বস্তি বোধে মনে হতো
বালিশ চাপা দিয়ে চুপ করিয়ে দিই  
চিরদিনের মতো ,
ঝুলিয়ে দিই বাঁশের সিলিং এ ।

আমাকে ঝোলাতে হয়নি
মা চলে গেছে ক্যানসারে।
আমার মা ,ঘুঁটে কুড়ানি মা,
হাড়ে চামড়া ঠেকিয়ে ।

বড়ো অসহায়,
   বড়ো জ্বালা,
জ্বালা এ বুকে বেকারত্বের।
সব শেষ ফিরলাম আজ ঘরে।
দেওয়ালে টাঙানো ফটো থেকে
   আলাদা করলাম তোকে।
ভালো থাকিস,
সুখে থাকিস.....
পুঁড়িয়ে ফেললাম  নিজেকে .......