এই শহরে আমি এক পথহারা কাক,
উঁচু দালানের কাচে প্রতিফলিত এক অচেনা ছায়া,
যে কারও জানালায় বসতে গেলে
ভিতর থেকে পর্দা টেনে দেওয়া হয়।
আমি উড়ি—
নিরাশার ঘন ধোঁয়ায় ঢেকে থাকা ব্যস্ত সড়কের ওপর,
যেখানে মানুষের মুখগুলো যান্ত্রিক ঘড়ির কাঁটা,
কারও থামার সময় নেই, কেউ পেছন ফিরে তাকায় না।
আমি বসি—
গলির শেষ মাথার ভাঙা ল্যাম্পপোস্টের ধারে,
যেখানে এক বৃদ্ধ কিছু শুকনো ভাত ছুঁড়ে দেয়,
সেটুকুই আমার প্রাপ্য!
সারাদিন শহর আমাকে যা ফিরিয়ে দিতে পারে,
তা ওই একমুঠো উচ্ছিষ্ট,
যার ভাগ নিতে আসে আরও কিছু ক্ষুধার্ত মুখ।
আমি খুঁজি—
কোনো এক চেনা বারান্দা,
যেখানে ছড়িয়ে রাখা হবে আমার ক্লান্ত ডানা,
একটা আশ্রয়, একটা ছায়া,
যেখানে বাতাস মৃদু দোল খায় ভালোবাসার মতো।
কিন্তু এই শহরে কাকের জন্য কোনো শেকড় নেই,
শুধু শূন্যতা, শুধু উড়তে থাকা ক্লান্তি।
তাই আমি আবার উড়ি,
বিলবোর্ডের আলোয় ভেসে থাকা অচেনা আকাশের দিকে,
যেখানে কোনো দিন হয়তো পাবো
একটা নিজের মতো আশ্রয়,
অথবা নিখোঁজ হয়ে যাবো কোনো অদৃশ্য দূরত্বে।
এই রূপক কবিতাটি শহরের এক নিঃসঙ্গ পথহারা মানুষের কাহিনী তুলে ধরে, যিনি নিজের অস্তিত্বের সংকটে নিমজ্জিত। শহরের ভিড়ে, যেখানে সবাই নিজের পথে চলে, এই মানুষটি যেন এক অদৃশ্য কাক—যে খুঁজে বেড়ায় একটি আশ্রয়, কিন্তু কোথাও ঠাঁই পায় না। তার জন্য কোনো আলোর রাস্তাও নেই, কেবল একের পর এক অন্ধকারই তার সঙ্গী।
এটি সমাজের এমন পথহারা, নিঃসঙ্গ মানসিকতার মানুষদের প্রতিনিধিত্ব করে, যারা নিজেদের অস্তিত্ব খুঁজে পেতে, যেখানে কোনো সহানুভূতি বা সমর্থন নেই, সেখানে তাদের জীবন চলতে থাকে। তারা কেউ দেখে না, কেউ বোঝে না। নিজের দুঃখ-কষ্টের বোঝা বহন করে চলতে থাকে, কোনো সহায়তা ছাড়াই।
কবিতায় ডাস্টবিনের উচ্ছিষ্ট ও খুঁজে পাওয়া অপ্রতুল জিনিসের মাধ্যমে সমাজের বঞ্চিত, নিঃস্ব মানুষের অবস্থা ফুটে ওঠে—যারা কখনোই নিজের জন্য কিছু পায় না, শুধু সমাজের অবহেলার মধ্যে দিয়ে অস্তিত্ব টেনে নিয়ে চলে।