আকাশ বাতাস ভারী করিয়া মুষল ধারায় বারি,
ষোড়শী কন্যা কাঁদিয়া কাটিয়া চলিল শ্বশুরবাড়ি।
গেল হপ্তা কাটাইয়া ছিল নির্বাক আর অনাহারে,
ছোট বলিয়া বাড়ির সকলে তাহার ধার না ধারে।
যখন তাহার বয়স ছিল বারো কিংবা তেরো,
জুটিল তাহার কপাল দোষে কলঙ্কেরও গেরো।
সেই সন্ধ্যায় তাড়া ছিল বাড়ি ফেরার পথে,
সেদিন বুঝি শুরু হইল জীবন উল্টো রথে।
সুযোগ পেয়ে পাড়া পড়শি ঘুম করিল হারাম,
মিথ্যের ফানুস উড়ায় সবে, যার খুশি যেরাম।
বিয়ের পিড়িতে বসিবার ছিলনা কোন ইচ্ছা,
মা মাসিরা শুনাইয়া দিল হরেক রকম কিচ্ছা।
যখন হাতে উঠিল তাহার শিকল পরা শাঁখা,
কচি মনটি ঢুকরে ওঠে, বুকটা করে খা খা।
সাত পাকে ঘোরার পরে সিঁদুর দিল লেপে,
অজানা ভয় আর আতঙ্কে বুকটা ওঠে কেঁপে।
পালকী চড়ে যাচ্ছে বঁধু ভিন্ন কোন গাঁয়ে,
মূর্ছা যাইয়া পড়ল তবে স্বামীটিরও পায়ে।
সঙ্গী সাথী ছিল যারা, তুলল তারে ধরে,
মুখ বাঁকিয়ে বলল তারা, সবাই এমন করে।
বরের তখন বয়স ছিল চল্লিশেরও ঘরে,
বুকের মাঝে ঢিপঢিপ করে যখন সামনে পরে।
বাসর রাতে পাষাণ স্বামী খাইল বুঝি ছিঁড়ে,
উপায় কোন নাইতো, সে যাইবে বাড়ি ফিরে।
স্বামী তাহার নিতাই গঞ্জের মস্ত সওদাগর,
পুকুর ধারে দেয়াল ঘেরা বড় দালান ঘর।
ঘর ভর্তি আছে তাদের অনেক গৃহ কর্মী,
তবুও তাহার মন ভরে না, হয়না সংসারধর্মী।
সারা দুপুর কাটে তাহার নির্জনতার মাঝে,
দিঘির জলে সাঁতার কাটে বিকেল কিংবা সাঁঝে।
জীবনটা তার পড়ল বাঁধা চার দেয়ালে ফাঁদে,
মায়ের কথা পড়লে মনে একা একা কাঁদে।
বয়স যখন ছিল তাহার কানামাছি খেলার,
সঙ্গী সাথী সবাই মিলে ময়ূর পেখম মেলার।
তখন তাহার নুয়ে পরা সোনা রুপার গয়নায়,
খাঁচায় ভিতর ঝাপ্টে মরে পোষা পাখী ময়নায়।
তাহার বাড়ির সামনে ছিল বড় একটা উঠান,
এখন সে যে হল তবে সাহা বাড়ির বৌঠান।
এক্কা দোক্কা খেলত সে সারা উঠান জুড়ে,
জানেনা সে আসবে কবে বাপের বাড়ি ঘুরে।
সাহস করে বলল যেদিন বাপের বাড়ি যাবে,
শাশুড়ি তার শুনিয়ে দিল, কঠিন শাস্তি পাবে।
বালিকা বঁধুর আবদারে তো দিলনা কেউ কান,
বাড়ির ছাদে কাকটি তখন ধরল অলুক্ষনে গান।
পরের বছর একই রকম মুষল ধারায় বৃষ্টিতে,
সপ্তাদশীর বিসন্নতার ঘোর জীবন জগত সৃষ্টিতে।
দিঘির জলে ভাসছে তাহার বারো হাতী শাড়ী,
এমনি করেই দিল বুঝি সে সবার সাথে আড়ি।