নিত্য দিনের মতই করিয়া উঠিলে রাঙ্গা ভোর,
গাঁয়ের বধুরা বিছানা ছাড়িয়া খুলিছে ঘরের দোর।
রাতভর খাটিয়া ঘুমাইতে গেল গাঁয়ের ছিচকে চোর,
ঐদিকে দেখ ডাকিতেছে নাক বাংলা মদের খোর।
বালকের দল খালের পাড়ে কটির গামছা খোলে,
একটু বড়রা ঝোপ জঙ্গলে লুঙ্গি খানা তোলে।
বৌ ঝিয়েদের আধোআলোতেই সারিতে হইবে কাজ,
নতুন বধুটির বেহাল দশা, মুখে সদা রাঙ্গা লাজ।
গরিব মাতাটি আগাইয়া দিলে পান্তা ভাতের থালা,
বালকটির তখন চোখে জল আসে, মুখটি করে কালা।
ছোট্ট মেয়েটির মান অভিমানে গোমরা মুখটি ফোলে,
যাহা জোটে, তাহা দিয়াই বাকিরা ঢেঁকুর তোলে।
সাত সকালেই কাটিতে হইবে ক্ষেতের সকল পাট,
বিকেলে আবার বাজার করিতে যাইবে নদীর ঘাট।
পরিপাটি করিয়া বড় ছেলেটিরে পাঠায় যখন স্কুলে,
হাটু জল ভাঙ্গিয়া বালকটি তখন সেই পথটি ভোলে।
মেয়েটি যখন বিলের জলে শাপলা শালুক তোলে,
ছোটটি তখন কাঁদিতেছে ভীষণ উঠিবে মায়ের কোলে।
কিশোরেরা দেখ মাতিছে খেলায় মাঠের কাদা জলে,
বন্যা এবার আসিবে শীঘ্র গাঁয়ের মুরুব্বিরা বলে।
বহুদিন পরে নিত্যানন্দপুরে আসিলাম আবার ফিরে,
বাল্য বন্ধুরা জুটিল সকলে, ধরিল মোরে ঘিরে।
আমি ততদিনে শহুরে বাসিন্দা ছুটিতেছি ঊর্ধ্বশ্বাসে,
গাঁয়ে ফিরিয়া মনের গহিনে হাঁপাইতেছি দীর্ঘশ্বাসে।