ছোট্ট শিশু কাঁদিয়া ডাকিতেছে মা
মা তাহার সন্ধ্যা তারা, কথা কয় না।
গ্রাম ছাড়িয়া শহরে পৌঁছেছে খবর,
এক সাহসী মায়ের দেওয়া হবে কবর।
ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে ভার,
বাপ মরা ছেলে,কত তার আবদার।
গ্রামে বসিয়েছে মেলা, হইবে যাত্রাপালা,
তারে নিয়ে যাইতে হইবে,দেখবে ছলাকলা।
চরকি ঘোরে, ঘুরিয়া ঘুরিয়া মানুষ আকাশে উড়ে,
সেও উঠিবে,উঠিতে না পাইয়া মাটিতে লুটাইয়া পড়ে, কাঁদিয়া কাঁদিয়া গড়াগড়ি খাইয়া মরে।
এতিম পোলারে কে বুঝায় তার ঘরে
আহার শেষ, জোগাড় করিতে মা'য় মরে।
আসিতেছে ঈদ,কিনিয়া দিতে হইবে নতুন জামা,
একখান নতুন কাপড়ের জন্য সারা ঘরে দামামা।
একদিন হঠাৎ ছেলেরে ধরিলো মরণব্যাধি রোগে,
ছেলের জীবন বাঁচাতে মা'য়ে,কত পীরের দরগায় ভাগে,
ছেলের অসুখ ছাড়িয়া দিয়া,মায়েরে ধরিলো জ্বরে,
সেই জ্বরে মা'য়, বিছানায় শুয়ে কাতরে কাতরে মরে।
পথ্য কিনিবার পয়সা নাই,কবিরাজ ডাকিতে ভয়,
খবর পাইয়া কবিরাজ বিনে পয়সায় পথ্য দিয়ে যায়।
কবিরাজের পথ্য খাইয়াও অসুখ সারে না মায়ের,
জীবন প্রদীপ ঘনাইয়া আসিতেছে , দুই পায়ের
কাছে বসিয়া ছেলে জোর হাত মুনাজাত করে,
মা'য় মোর ভালো হইলে শিন্নি চড়াইবো মুর্শিদের মাজা'রে।
বাপ মরা ছেলে সারাদিন কাঁদিয়া কাঁদিয়া কয়,
মায়েরে আমার ভালো করিয়া দাও খোদা- দয়াময়।
মা' ছেলেরে ডাকিয়া কয়," কাঁদিস না মুই ভালো হই যামু"
মনে মনে বলে, সোনামানিকেরে কোথায় রাখিবার পামু।
এমনি করিয়া হঠাৎ মা'য়ে, পরলোকের বাসিন্দা হয়,
এতো ডাকিতেছে ছেলে, কথা কয় না এমন সোনার মা'য়।
সাদা কাফনের কাপড়ে মা'য়েরে মুড়ে,
সাড়ে তিন হাত মাটির কবর খুঁড়ে,
মায়েরে শুইয়ে দিলো অন্ধকার কবরে!