যদি আমি হারিয়ে যাই পৃথিবীর পথে;
আমাকে তুমি খুঁজতে যেও না ঐ দূর দিগন্তে,
আমাকে তুমি পেতে পারো—
নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রজনীতে—
যখন আমি কাব্যমালা গাঁথতাম—
তোমাকে ভালোবাসার অজুহাতে।
কিংবা আমাকে পেতে পারো—
আমার নিষ্প্রাণ দেহের সমাধিস্তম্ভ-লিপিতে;
এপিটাফের যেই নামটি থাকতো হামেশা—
তোমাকে লেখা চিঠিগুলোর ইতিতে,
নামটি তোমাকে স্মরণ করাবে—
আমার সেই জীবৎকালের প্রণয়াভিলাষী মূর্তিকে—
আর তখন আমি—
জীবন্ত মানব হয়ে পৌঁছে যাবো তোমার কল্পনার জগতে।
যদি আমি হারিয়ে যাই পৃথিবীর পথে;
যে পথে হারিয়ে গিয়েছিলো—
আমার মত প্রণয়দগ্ধ অজস্র জীবন— যুগে যুগে,
যে পথ তমসাচ্ছন্ন হয়ে আছে বিষাদের কালো মেঘে,
যে পথ রঞ্জিত হয়ে আছে বেদনার নীলে;
এ পথের সন্ধান পাবেনাকো তুমি কোনো কালে,
তাই আমাকে খুঁজতে যেও না ঐ দূর দিগন্তে,
হয়তো আমাকে পেতে পারো—
অরুণদিপ্ত প্রভাতের গোধূলি মুহুর্তে—
যখন আমি
সেই অপরুপ নিসর্গশোভা'কে উপমিত করতাম তোমার সাথে।
অথবা, আমাকে খুঁজে দেখতে পারো আমার কবিতাগুলোতে—
যেখানে তোমাকে স্থাপন করেছি আমি প্রতিটি পঙক্তিতে,
কিংবা, পেতে পারো আমায়— অমাবস্যার রাতের আকাশে—
যখন আমি তোমার ছবি আঁকতাম— তার অংশুহীন ক্যানভাসে।
যদি আমি হারিয়ে যাই পৃথিবীর পথে;
আমাকে খুঁজে দেখতে পারো— বৃষ্টিধারার নিরলস জলপ্রপাতে—
যখন আমার উন্মত্ত মন ভিজতো তোমাকে সাথে নিয়ে,
আর তখন আমি তোমাকে অনুভব করতাম—
আমার সিক্ত হাতের স্পর্শ দিয়ে,
(যদিও তুমি তখন থাকতে না আমার দ্বার-প্রান্তে)
আমাকে খুঁজতে যেও না ঐ দূর দিগন্তে;
আমাকে পেতে পারো— প্রসন্ন গোলাপের রক্তিম পাপড়িতে—
যে গোলাপ তোমাকে দেবো বলে— রাখতাম আমি নিভৃতে,
অথবা তাঁর বিষম কাঁটার তীব্র আঘাতে;
তোমার অবহেলা যে আঘাত ফোটাতো আমার বিষণ্ণ মনে'তে।
যদি আমি হারিয়ে যাই পৃথিবীর পথে;
আমাকে খুঁজে পাবে হয়তো— মধ্য নিশীথের সন্ত্রস্ত নীলিমা'তে—
যেখানে আমার তন্দ্রাহীন দুটি চোখ—
সজ্জিত করতো তোমায়— সীমাহীন অনুরতি'তে।
অথবা, অস্তপারের তুষার-সুভ্র সন্ধা তারাতে—
যেই সুভ্র আভা প্রজ্বলিত হতে দেখেছি আমি— তোমার মুখশ্রী'তে।
যদি আমি হারিয়ে যাই পৃথিবীর পথে;
আমাকে তুমি খুঁজতে যেও না ঐ দূর দিগন্তে।