তোমরা বললে,
আমার পতাকায় শেকড় গেড়েছে শকুন-
এসো কলঙ্কমুক্ত করি প্রিয় স্বদেশ, উপড়ে ফেলি শকুনের শেকড়।
আমরা এগোই, প্রাণপণ লড়ি বুট-বুলেটের বিরুদ্ধে।
শকুন থাবা দেয়-
আমাদের চোখ উপড়ে যায়, বুকে বুলেট লাগে
মাথার খুলি উড়ে যায়।
বাড়িতে হাহাকার পড়ে, গগনবিদারী চিৎকার করেন মা,
আর কোনোদিন মারপিট না করার শপথ নিয়ে আমার বাড়ি ফেরার প্রার্থনা করে আদরের ছোটবোন।
গোরখোদকের যন্ত্রণা বাড়ে, মাঠের পর মাঠ শ্মশান পড়ে যায়। হঠাৎ অজ্ঞাতপরিচয় মরদেহের সংখ্যা বেড়ে যায় মর্গে।
তারপর?
তারপর হিসেব কষে দেখা যায় আমরা অগণিত-
কামানের চেয়ে ঢের বড় আমাদের বুক, সংখ্যায় বুলেটের দ্বিগুণ। অতএব কেঁপে ওঠে শকুনের মসনদ।
তারপর?
তারপর তল্পিতল্পা গুটিয়ে শকুন পালায়।
আমরা উল্লাস করি-
আনন্দাশ্রু ঝরে, মিষ্টি বিলি হয়;
বহু আরাধ্য সুখে ভাসি পদ্মায়,
দুহাত প্রসারিত করে উড়ি মুক্তির আনন্দে।
তারপর?
তারপর মুনকিরনাকিরের আসনে বসে ঘ্যানঘ্যান করে ইতিহাস, শুধায়-
কথিত মুক্তির হাজার গল্প পোথা আছে আস্তাকুঁড়ে;
প্রতিবার নেতারাই স্বাধীনতা খামচে ধরেছে শকুন হয়ে।
মুক্তি এসেছিল সাতচল্লিশে, অথচ বায়ান্নে ফের রক্ত ঝরল তোমার; আটান্নে ফের বন্দী হলে, উনসত্তরে মুক্তির দাবিতে ফের মসনদ ভাঙলে জালিমের।
একাত্তর এলো,
শেখ সাহেব বললেন, এবার চূড়ান্ত সংগ্রাম।
তোমার রক্তে রঞ্জিত হলো এই ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল, কঠিন প্রতিরোধে পালালো হায়েনা,
ফের স্বাধীনতার সুখ, সেই মুক্তির স্বাদ।
তারপর?
তারপর ফের বেদখল হলো স্বাধীনতা,
বাহাত্তর থেকে আশি- কত মুক্তি এলো গেলো;
আবার ডাক এলো নব্বইয়ে, তুমি বুক পেতে দিলে।
আবার বুলেট বিদল বুকে, প্রাণ দিলে তুমি-
মুক্ত হলো দেশ, ফের আনন্দ।
দুই হাজার তেরো এলো,
এবার স্বাধীনতা বেহাত হতে দেখে টুঁশব্দও করলে না!
আঠারো এলো, এবারও নিশ্চুপ তুমি!
চব্বিশে যুদ্ধের ডাক এলো-
তুমি আর চুপ থাকলে না, বুক চিতিয়ে দিলে।
তারপর?
তারপর নতুন গ্রন্থ লেখায় মন দিলো ইতিহাস, আমি ফের মাতি মুক্তির উল্লাসে।
এমন সময় হঠাৎ চেয়ে দেখি পাতাকায় তোমার থাবা!
যে তুমি শেকল ভাঙার ডাক দিয়েছিলে, সে তুমিই আমায় বন্দী করলে!
সে তুমিই ঝুলে পড়লে পতাকায়, রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে বললে- বাড়াবাড়ি করো না!
আমার কবিতার খাতা ছিনিয়ে নিলে,
প্রতিবাদ করায় গলা চেপে ধরলে তুমি!
থাপ্পড় দিয়ে শুধালে, মুক্তি বলতে কিচ্ছু হয় না!