তুমি চাইলে, গল্পটা অন্যরকম হতে পারত,
শহরের ক্লান্ত বিকেলে আমরা দু’জন
একটি অচেনা গলির মোড়ে থমকে দাঁড়াতাম,
হাতের কফির কাপে জমে থাকত উষ্ণতা,
আর আমাদের দু’জনের চোখে—
একটা হারিয়ে ফেলা সময়ের ছায়া।
তুমি চাইলে, গল্পটা অন্যরকম হতে পারত,
প্রথম দেখার দিনটাতে যদি বৃষ্টি না আসত,
অথবা আসলেও যদি আমাদের ছাতাটা ভাগাভাগি হতো,
হয়তো ভিজে যেতো না শুধু কাপড়,
হয়তো ভিজে যেতো আমাদের মনও,
তোমার হাসির জলছাপ গলে নামত আমার শিরায়।
তুমি চাইলে, গল্পটা অন্যরকম হতে পারত,
শহরের দেয়ালে আঁকা রাজনৈতিক শ্লোগান
পড়ে শিখতাম আমরা বিদ্রোহের পাঠ,
একসাথে স্বপ্ন দেখতাম বিপ্লবের লাল সূর্যোদয়,
অথচ তুমি থেমে গেলে মাঝপথে,
ফেলে গেলে শুধু কিছু অসমাপ্ত কবিতা।
তুমি চাইলে, গল্পটা অন্যরকম হতে পারত,
আমাদের রাতের দীর্ঘ কথোপকথনগুলো
শেষ হতো না কোনো ক্লান্ত অভিমানে,
হয়তো তুমি বলতেই পারতে,
"থাকো, আরেকটু থাকো..."
অথচ, তুমি শুধু বিদায় জানালে—
একটি চিরকুটে নীরবতার ছাপ রেখে।
তুমি চাইলে, গল্পটা অন্যরকম হতে পারত,
আমরা হয়তো এখনো একসাথে বসতাম,
একটা পুরোনো বইয়ের দোকানের জানালায়,
তুমি হয়তো আমার চোখে খুঁজতে
একটি হারিয়ে যাওয়া কবিতার পঙক্তি,
আমি হয়তো খুঁজতাম তোমার ঠোঁটে—
একটা অসমাপ্ত গল্পের উপসংহার।
তুমি চাইলে, বসন্তের বাতাসে এখনো
আমাদের নাম একসাথে উচ্চারিত হতো,
সন্ধ্যার প্রদীপের মতো টিমটিম করত
ফেলে আসা ভালোবাসার স্মৃতি,
নদীর বুকে ভেসে থাকা চাঁদের আলোয়
আমরা হয়তো স্বপ্ন গড়তাম,
একটা অন্যরকম কালবেলা!
তুমি চাইলে, সব গান আজও আমাদের হতো,
শহরের ব্যস্ততার ফাঁকে,
কোনো এক অচেনা কবি আমাদের কথাই লিখত,
অথচ, এখন সব গান কেবলই বিষাদ,
সব কবিতা পরিণত হয়েছে বিষাদগাথায়,
সব পথ রয়ে গেছে নির্জন—
তোমার না বলা কথার মতো।
তুমি চাইলে...
কিন্তু, তুমি চাওনি,
গল্পটা শেষ হলো এক ব্যথার রেখায়,
যেখানে প্রেম নেই, নেই কোনো উষ্ণতা,
শুধু এক দীর্ঘশ্বাস বয়ে চলে—
তোমার আমার মাঝখানের শূন্যতায়...