আমি প্রথমবার এসেছি সমুদ্রের কাছে,
আগে কখনো এভাবে পথ ছেড়ে আসিনি,
শহরের ইট-কাঠ, দেয়াল, ছাদ,
সব ফেলে রেখে ছুটে এসেছি—
এক অনন্ত নীল বিস্ময়ের সামনে।
ঢেউয়ের গর্জনে কেঁপে ওঠে হৃদয়,
আকাশের সঙ্গে মিশে যায় দিগন্তের রেখা,
এতোদিন যে জীবন ছিল চার দেয়ালের ভেতর—
সে জীবন আজ খুলে দিয়েছে দরজা,
আমি দাঁড়িয়ে আছি
এক উন্মুক্ত দিগন্তের সামনে!
কখনো কি আমি এতটা মুক্ত ছিলাম?
কখনো কি আমি এতটা হারিয়ে গেছি?
জলের ছোঁয়ায় ভিজে যাচ্ছে পায়ের চিহ্ন,
যেন সমস্ত ক্লান্তি ধুয়ে দিচ্ছে সমুদ্র,
যেন সমস্ত পুরনো ব্যথা
তলিয়ে যাচ্ছে নোনাজলে!
আমি ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে ভাবি,
এরা কি আমাকে চেনে?
আমার নাম জানে না,
আমার পরিচয় জানে না,
তবু কী অদ্ভুত আত্মীয়তা
এই বিশাল নীলের সঙ্গে!
আমি সমুদ্রকে ছুঁতে চাই,
যেমন সে ছুঁয়ে যায় আমার দেহ,
যেমন সে ধুয়ে দেয় আমার ভেতরের নির্জনতা।
আমি ঢেউয়ের সঙ্গে হারিয়ে যেতে চাই,
সমুদ্রের মতোই বেপরোয়া হতে চাই,
আজ আমি তারই সন্তান!
আমার ভেতরেও এক সমুদ্র আছে,
যে দীর্ঘদিন ছিল ঘুমিয়ে,
আজ তারও ঢেউ উঠছে,
তারও গর্জন শোনা যাচ্ছে—
আমার বুকের ভেতর!
এই নোনা বাতাস কি আমাকে ডেকেছিল?
এই অজানা নীল পথ কি আমার অপেক্ষায় ছিল?
আমি কি জন্ম থেকেই এই জলের মানুষ?
আমি কি এতদিন নিজেকেই ভুলে ছিলাম?
আজ যেন সব প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি—
আমি কোনো দেয়ালের মানুষ নই,
আমি সমুদ্রের সন্তান!
আমার হৃদয়ে ঢেউ আছে,
আমার চোখে নোনাজল,
আমার শরীরে বয়ে চলে এক বন্য বাতাস!