আমি একদিন একটা শহরের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়েছিলাম,  
সেখানে বাতাসে ভাসছিলো ধুলো, ভাঙা ইটের গুঁড়া,  
একটা নিঃসঙ্গ রাস্তার মোড়ে একটা ছেলেকে দেখেছিলাম,  
তার চোখে ছিলো এক হারিয়ে যাওয়ার ছাপ।  

সে বলেছিলো— "আমাকে খুঁজতে এসেছো?"  
আমি চুপ করে ছিলাম,  
আমি তো নিজেও নিখোঁজ, আমারও তো কোনো ঠিকানা নেই।  
আমি বললাম— "তুমি কোথায় যাবে?"  
সে হাসলো, একটা মরিচা ধরা স্বপ্নের মতো হাসি,  
বললো— "আমি তো সেইদিন থেকেই চলেছি,  
যেদিন আমার নাম মুছে গিয়েছিলো দেয়ালের পোস্টার থেকে।"  

গল্প বলতে বলতে রাত নেমে আসে,  
গল্প বলতে বলতে শহরের লাইট নিভে যায়,  
গল্প বলতে বলতে আমরা দুজন একসাথে হেঁটে চলি,  
আমি তাকে খুঁজতে এসেছি, নাকি সে আমায় খুঁজতে এসেছে—  
তা আর বুঝতে পারি না।  

একটা মেয়ে ট্রেন স্টেশনে বসে ছিলো,  
তার হাতে একটা ফেলে দেওয়া চিঠি,  
তার চোখের নিচে অন্ধকারের ছায়া,  
সে তাকিয়ে ছিলো শূন্যে,  
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম— "তুমি কাকে খুঁজছো?"  
সে বললো— "একটা চিঠি দিয়েছিলাম, উত্তর আসেনি,  
একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম, শেষটা মনে নেই।"  

গল্প বলতে বলতে সে তার হাত বাড়ালো,  
গল্প বলতে বলতে তার আঙুলের ভেতর ভাঙা এক আংটি,  
গল্প বলতে বলতে ট্রেনটা এল, আবার চলেও গেলো,  
সে শুধু তাকিয়ে রইলো, আর কেউ ফিরলো না।  

একটা লোক পাথরের গায়ে মুখ লুকিয়ে কাঁদছিলো,  
তার পকেটে ছিলো এক পুরনো কবিতার বই,  
সে আমাকে দেখেই চমকে উঠলো,  
বললো— "তুই কি আমায় খুঁজতে এসেছিস?"  
আমি বললাম— "আমি তো শুধু হারিয়ে যাওয়া পথ খুঁজি।"  
সে বললো— "তবে একদিন আমাকেও ভুলে যাবি!"  

গল্প বলতে বলতে আমরা ভিজে যাই বৃষ্টিতে,  
গল্প বলতে বলতে শহরটা ঝাপসা হয়ে আসে,  
গল্প বলতে বলতে একে একে সবাই চলে যায়,  
শুধু আমি আর আমার ছায়া পড়ে থাকি রাস্তায়।  

একদিন আমিও নিখোঁজ হয়ে যাবো,  
কেউ খুঁজতে আসবে না, কেউ ডাকবে না,  
শুধু বাতাসের ভেতর থেকে কে যেন বলবে—  
"ওহে পথিক, তুমি কাকে খুঁজছো?"