আমি কি বিপ্লবী? আমি কি দর্শনের কারাগারে বন্দী?
আমি কি রাজপথের আগুন, নাকি নীরব এক সন্ন্যাসী?
লোকেরা আমায় চিনে অন্য নামে, অন্য আলোয়,
কিন্তু আমি তো চাই ছিলাম এক পাড়ার ছেলেটাই!
আমি চেয়েছিলাম নদীর জলে পা ভিজিয়ে হাঁটতে,
ধানখেতের গন্ধ মেখে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরতে,
আমি চেয়েছিলাম মেঠোপথের ধুলোয় হারিয়ে যেতে,
তবু কেন রাজনীতির আগুন এসে আমায় দাহ করে?
আমি চেয়েছিলাম নিখাদ প্রেম,
একজোড়া উষ্ণ হাত, দিগন্ত বিস্তৃত সুখের গান,
তবু কেন আমার হাতের রেখায় লেখা হয়
বিদ্রোহের রক্তাক্ত ইতিকথা?
আমি সাধারণ হতে চাই,
যেমন হয় এক চাষা, এক জেলে, এক মুটে,
আমি ক্লান্ত পথিক, আমায় ঘুমোতে দাও,
আমার যন্ত্রণা বোঝো না, বোঝার প্রয়োজনও নেই!
আমি বিপ্লব চাইনি, বিপ্লব আমায় চেয়েছে,
আমি দর্শন চাইনি, দর্শন আমায় বেঁধেছে,
আমি ভালোবেসেছিলাম জীবন,
কিন্তু জীবন আমাকে অন্ধকারেই ঠেলে দিয়েছে।
তোমরা আমাকে ভুল বুঝো,
আমাকে বিদ্রোহী বলো,
কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি শুধু একবার
নিশ্ছিদ্র নীরবতায় হারিয়ে যেতে চাই!
আমি চুপ করে থাকতে চাই,
তোমাদের সভা, স্লোগান, আন্দোলন থেকে দূরে,
একটা সহজ জীবন চাই—
যেখানে শুধু আকাশ থাকবে, বাতাস থাকবে,
আর থাকবে একটুখানি ভালোবাসা!
তবে কি আমি প্রেমিক নই?
সে রাতে জোছনার নিচে দাঁড়িয়ে যে কথা বলেছিলাম,
সে কি শুধুই বিপ্লবের শপথ ছিল?
না কি দু’টি হৃদয়ের গোপন আকুতি?
আমার কবিতার শব্দগুলো বিদ্রোহী হয়ে ওঠে,
তবু সেগুলো একদিন ভালোবাসার গান ছিল,
তোমার চোখের গভীরতা মেপেই তো
আমি বিপ্লবের ভাষা শিখেছিলাম!
আমি ক্লান্ত, আমি ক্ষুধার্ত, আমি পথহারা,
আমি কী চাই তা জানি না, শুধু জানি—
এই তীব্র শোরগোলের ভিড়ে আমি একা,
একা আমার সমস্ত স্বপ্ন, সমস্ত আর্তনাদ।
যারা আমায় বিদ্রোহী বলো,
তোমরা কি জানো, একদিন আমি
তোমাদের মতোই এক সাধারণ মানুষ ছিলাম?
আমি কি সেই মানুষটাকে ফিরে পাবো?
যদি কোনো দিন ফিরে আসি,
একদম সাদামাটা জীবন নিয়ে,
তবে কি তোমরা আমায় চিনতে পারবে?
নাকি আমি হারিয়ে যাবো সময়ের ধুলোয়?