একটু আগে যে মানুষটাকে টেনেহিঁচড়ে
পিছমোড়া বেঁধে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল
আমি তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে
নাড়ি বেয়ে বেয়ে হৃৎপিণ্ডে পৌঁছে দেখি
সেখানে এক পিতৃপুরুষের সংসার।
খুব সকালে চায়ের সঙ্গে এক টুকরো রুটি
দুপুরের খাবারের টাকায় ছেলের কলম
মেয়ের জন্য পেন্সিল কিংবা মায়ের ওষুধ
আর অভিমান ভুলে থাকা বউটির জন্য
কতদিন ভেবেছিল, একটা কিছু কিনে এনে
হঠাৎ একদিন তাকেও চমকে দেবে সে
আর কপট অভিমানে লজ্জায় রাঙা হবে বউ।
বুকের তলায় আশা জাগানিয়া তান্ডব
মুষ্টিবদ্ধ হাতের মশালে আকাঙ্ক্ষার আলো
দাউদাউ জ্বলে ওঠে মগজে -মননে-কন্ঠে
নিঃশংকচিত্তে মুখরিত হয় ঝাঁঝালো শ্লোগান
ন্যায্য মজুরি, মুনাফার হিস্যা, স্বপ্ন দেখার সাধ
মানুষের মিছিল, কারখানার ফটকে, রাজপথে
অতপর পুলিশ, লাঠি, টিয়ারগ্যাস ও হাতকড়া।
মানুষটার চোখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে এনে
নাড়ি বেয়ে বেয়ে তাঁর বাড়ি পৌঁছে দেখি
একটি শুস্ক বিষন্ন মুখ উদাস দৃষ্টি ফেলে
এক টুকরো অলীক স্বপ্ন নিয়ে ঘরে ফেরা
মানুষটার পদধূলির অপেক্ষায় ক্লান্ত ভীষণ,
স্বপ্নের বাঁশি নিয়ে প্রতি রাতে বাড়ি ফেরা বাবা-র
প্রতীক্ষায় প্রহর গুনে গুনে ঘুমিয়ে পড়েছে তারা,
আর গভীর মমতায় সন্তানের শুভকামনায়
প্রার্থনায় রাত জেগে আছে এক দুখবতী মা।
কারখানার মালিকের চোখে তিনি ভয়ংকর সন্ত্রাসী
পুলিশ, রাষ্ট্র এবং আইনের চোখে তিনি রাষ্ট্র বিরোধী
সমাজের চোখে তিনি দুষ্কৃতকারী.....
পরদিন আদালতে তাঁর জবানবন্দিতে জানা গেল
আসলে তিনি ওসবের কিছুই নন,
সকলের মতো তিনিও একজন পিতৃপুরুষ।
------------------------