পাশের বাড়ির উঠোনে দারুচিনি গাছ
সন্ধ্যা নামলেই তার গন্ধ ভেসে আসে
আমি বারান্দার আলো নিভিয়ে রাখি
আমার ঘরে রাত্রি নামে,
অন্ধকারে গন্ধ মাতাল অবশ শরীর
মগজের সেতারে বেজে ওঠে রবি ঠাকুর-
'বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বাণী..... '
খোলা জানালায় উঁকি দেয় জীবনানন্দ-
'বুড়ি চাঁদ কখন যে ডুবে গেছে.... '
মেঝেতে ছড়ানো শরৎ-বিভূতি- মানিক
দুয়ারে নজরুল, দেয়ালে চে, কাস্তে ও হাতুরি
এই আমার ঠিকানা, বহুকাল চিঠি আসে না।
পাশের বাড়ির দরোজায় ঘণ্টা বাজে
ডাক পিয়নের হাঁক শুনি- চিঠি......!
চিলের মতো ছোঁ মেরে নিয়ে গেল কেউ
বাড়িতে হুলস্থুল, ছেলেটা ফিরবে এবার
মায়ের আঁচল অশ্রুসজল, বাবার দীর্ঘশ্বাস।
পাশের বাড়ির উঠোনে রক্তমাখা কফিন
পুলিশ প্রহরায় স্বজনের আহাজারি
শ্রমিক-কৃষক -ক্ষেত মজুর, জননী-জন্মভূমি
দারুচিনি গাছের তলায়
সমবেত জনতার মৌন মিছিল,
কফিনের তলদেশ হতে শীতল রক্তের ধারা
গড়িয়ে যায় পদ্মায় - মেঘনায়- যমুনায়।
পাশের বাড়ির ছেলেটার সুকান্ত সমগ্র
আমার বাড়ির চিলেকোঠায়
ধুলোর আস্তরণে,
যে চিরকুট লিখে সে নিরুদ্দেশ হয়েছিল
যে দেশলাই টা ভুল করে ফেলে গিয়েছিল
তোষকের নীচে রাখা লাল পাঞ্জাবি টা
সুতপাকে লেখা তিন পাতার একটি চিঠি
এবং কবিতার খাতা ও একটি কলম
এখন আমার স্বপ্নের পাঠাগার।
-----------------------------------