আজ অনেকদিন পর
আমার অনেক কাছের বন্ধু
বুড়ি’র সাথে বিকেলের আলোয় দেখা
আমি বুড়ির কথা কিছুই
ওর আন্তরিকতা, অন্তর্দৃষ্টি আর
সবকিছুকে ছাপিঁয়ে আমাকে
আপন করে নেয়ার দিনগুলোর কথা
এতটুকুও এখনও ভুলে যাইনি
অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছি
আজকে কত কত বছর পর
ওর সাথে আমার আবার দেখা হলো…!
কতদিনের কত আবদার, খুনসুটি
আরও কত কত অভিমান
অনেক ভেঙে পড়া সময়ে
কিভাবে একটু স্বস্তির পরশ দিতো
এই আমার বন্ধু বুড়ি
মনে মনে যত কষ্ট পেয়েছি
দারিদ্রের, স্নেহহীনতার, অপমানের
প্রত্যাখ্যানের আঘাত যেন
বুড়ির কাছে এলে নিঃশেষে বিভাজ্য হয়ে যেত…
তরুণ বয়সে সমবয়সী বুড়ির কাছে
ওর চোখের সামনে বসে কেঁদেছি
আমার অশ্রুর বাষ্প ওকে’ও ছুঁয়েছে
আমার চোখে চেয়ে ও বললো,
‘তুই অনেকদিন খুব কষ্ট পেলি, না !
কতদিন হলো বলতো?’
ওর একথার আর কি উত্তর দেবো !
যে আমার বিষন্ন দিনের বন্ধু
তাঁর চোখের সামনে নিরুত্তর বসে আছি…
‘কেউ ভালোবেসে চলে যেতে চাইলে
তাকে না বিদায় জানানো যায়
আর না যায় তাকে ধরে রাখা’ ও বললো…
কথাটা খুব মনে বেঁজে চললো
এমনই একটা বিদায়ের দিনে
শুধু মানসী’কে বিদায় জানাতে হবে বলে
কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম
বুড়ির কাছে সেই পুরোনো দিনের মত
আবারও সব হাত পা বিহীন প্রশ্ন করছি
‘বিদায় দেয়া কঠিন নাকি নেয়া !
তুই কি বলতে পারবি ?’
‘আমি তো কখনও বিদায় দিইনি
অথবা বিদায় নিতেও চাইনি’
বুড়ির একটু হঠাৎ দীর্ঘশ্বাস…
তার পর যেন এতগুলো বছরের
নির্বাণ দীপ ঝল্কে ঝল্কে জ্ব’লে উঠছে
বুড়ির অবয়বে একটি অন্য প্রচ্ছায়া
যা আগে কখনও দেখিনি
অথবা ভালোবাসার ব্যস্ততায় দেখতে চাইনি
‘তুই কেমন ছিলি এতদিন !
তোর সংসার আর সবাই ?’ আলোতে ফিরে আসি
বাইরে সন্ধ্যার অন্ধকার গাঢ় হয়ে এলে
বুড়ির কন্ঠে একটা মিহিন এস্রাজের সুর…
‘আমি কারো কাছ থেকে বিদায় নিইনি ব’লে
আমাকে বিদায় জানানোর’ও কেউ নেই !
তবে একটা কথা খুব সত্যি… জানিস !
তোর কাছ থেকেই আমি
ভালোবাসতে শিখেছিলাম, ভালোবেসেছিলাম…’