আমাদের রূপকথার কবি শাহনূর, মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ স্মরণিকা

ড. মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ (৩১ অগাস্ট ১৯৪৬ — ২৮ নভেম্বর ২০২৪), টলেডো, ওহাইওর বাসিন্দা, সংক্ষিপ্ত অসুস্থতার পর ২৮ নভেম্বর ২০২৪-এ ইহলোক ত্যাগ করেন।

মেসবাহ ছিলেন সাত ভাইবোনের মধ্যে জ্যেষ্ঠ। তাঁর বাবা ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মা ছিলেন সাহিত্যানুরাগী। তিনি ঢাকায় একটি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে পড়াশোনা করেন এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল সায়েন্স বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমান বুয়েট) থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন এবং দুই বছর সেখানে কাজ করেন। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ এম.এস. এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

তিনি শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন আলাবামা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। এরপর ইস্টার্ন কেনটাকি ইউনিভার্সিটিতে যোগ দেন এবং ১৯৮০ সালে ইউনিভার্সিটি অফ টলেডোতে যোগ দেন। ২০১৫ সালে তিনি ইনফরমেশন অপারেশনস অ্যান্ড টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে আংশিক অবসর নেন এবং ২০১৮ সালে পুরোপুরি অবসর গ্রহণ করেন।

একজন অসাধারণ শিক্ষক হিসেবে তিনি নিজেকে এবং তাঁর শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ মানে উন্নীত করতে সবসময় সচেষ্ট ছিলেন। তিনি রাত অবধি পাঠদানের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকতেন। শিক্ষার্থীরা তাঁর ক্লাস নিতে লাইন দিত এবং তাঁর শিক্ষা অনেক শিক্ষার্থীর উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। তিনি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একজন মেন্টর হিসেবে কাজ করতেন এবং তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রে নতুন জীবনে মানিয়ে নিতে সহায়তা করতেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অফ টলেডোর আউটস্ট্যান্ডিং টিচিং অ্যাওয়ার্ড এবং কলেজ অফ বিজনেস গ্র্যাজুয়েট টিচিং অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। তিনি বিভিন্ন কোম্পানির জন্য আইটি এবং ম্যানুফ্যাকচারিং-সংক্রান্ত পরামর্শমূলক প্রকল্প এবং প্রশিক্ষণ পরিচালনা করতেন।

যদিও তিনি ছিলেন একজন প্রকৌশলী, তাঁর হৃদয় ছিল কবির মতো সংবেদনশীল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা এবং গান তাঁকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করত। বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষের কবিতা সাহিত্য ও গানের প্রতি ভালোবাসা ছিল তাঁর জীবনের অন্যতম আনন্দের উৎস। তিনি বাংলা কবিতার আসর ও মুক্তমঞ্চে নিয়মিত লেখালিখি করেছেন এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী মুগ্ধ পাঠকবন্ধুর ভালোবাসা পেয়েছেন। মুক্তছন্দে রচিত তাঁর কবিতা বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সংযোজন। অচিরেই তাঁর কবিতা সমগ্র নিয়ে একটি সংকলন বের হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

তিনি প্রতিদিন পাঁচ মাইল হাঁটতেন, মাছ ধরতেন এবং একটি চমৎকার বাগান তৈরি করেছিলেন যা প্রতিবেশীদের মুগ্ধ করত। অবসরে তিনি লেখক হওয়ার শৈশবের স্বপ্ন পূরণে মনোনিবেশ করেন এবং শত শত কবিতা রচনা করে গেছেন। যারা তাঁকে চিনতেন, তারা তাঁর রসিকতা, উদার মনের স্বভাব, শিখানোর আগ্রহ, প্রাণবন্ত রাজনৈতিক আলোচনা, চিন্তাশীল ইমেল এবং নাতি-নাতনিদের প্রতি তাঁর অফুরন্ত ভালোবাসা গভীরভাবে চিরদিন স্মরণ করবেন।

তাঁর বাবা-মা মোসলেম উদ্দিন তালুকদার এবং জেবান নেহার এবং ভাই মোশি উদ্দিন আহমেদের পর তিনি পরলোক গমন করেন। তাঁর দীর্ঘ ৫১ বছরের সঙ্গিনী স্ত্রী নারগিস, সন্তান শালমলি (জোসেফ ফ্রেস), রিউবেন, শাওলি (নিকোলাস রোসিওলি), নাতি আষাঢ় এবং আলিয়া, এবং ভাইবোনদের রেখে গেছেন।

পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১১ ডিসেম্বর বুধবার, ওয়াকার ফিউনারেল হোম, ৫১৫৫ ওয়েস্ট সিলভানিয়া অ্যাভিনিউ, টলেডো, ওহাইওতে বন্ধু এবং আত্মীয়রা তাঁদের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারেন। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শোকসভা অনুষ্ঠিত হবে, যা ২টার পর স্মরণসভার মাধ্যমে শেষ হবে। পরিবারের অনুরোধ, ফুলের পরিবর্তে যে কোনো পছন্দের দাতব্য সংস্থায় দান করার কথা বিবেচনা করতে।

মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ -এর স্মরণসভা অনুষ্ঠানটি লাইভ স্ট্রিমের মাধ্যমে প্রচারের একটি সিদ্ধান্ত পারিবারিকভাবে গৃহিত হয়েছে। যথাসময়ে সেটির আপডেট এখানে জানানো হবে। আগ্রহী বিদগ্ধ পাঠকবন্ধু গন অনুষ্ঠানটিতে যুক্ত হয়ে কবি শাহনূরের প্রতি শ্রদ্ধা বক্তব্য ও কবিতা পাঠ করতে পারবেন।

সবারই শুভ ও কল্যাণ হোক