*বোক্যেটো’য় নিমগ্ন হতে গিয়ে
যেন স্বশব্দ-বিড়ম্বিত হয়ে বিস্ময়বিমুগ্ধ হলেম
তোমার ইথারবাহী স্বাভিমানী ছত্রে…
তুমি এখন কিছুটা ভালো রয়েছো জেনে
নিশ্চিন্ত হলে’ও তোমার
সর্বস্ব পাথর হয়ে যাওয়ার ভাবনায়
তড়িতাক্রান্ত হতেছি দেহমনে…

আমি কখনো মেরুদন্ডে ইনজ্যেকশ্যন নিইনি
তাই তোমার কি অপানুভূতি হলো,
সে আমি কইতে পারছিনে…
কিন্তু তুমি বেশি বেশি নড়াচড়া ক’রো না
তাহলে আবার কি হতে কি হবে, বলা যায়…!
তোমার সোনালী রোদ্দুরের কথা শুনে
জানতে ইচ্ছে হয়েছে,
আমি যেমন বিলেতে দেখেছিলেম
সূর্যদেব প্রায় সারা বছরই দখিনের আকাশে
হেলান দিয়ে ঘুড়ির মত উড়ে যেতে থাকতো,
তুমি’ও কি তেমন দেখতে পাও?
ওয়্যেস্ট বেল্ট পরে তাই রে নাই রে
ক’রে বেড়িয়ো না বেশি, কেমন তো?
আমি জানি, থেকে থেকেই
“কোথাও তোমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা” দশা হয়…
তাই সাবধান থাকতে মনে করিয়ে দিলেম…

ভাবছি, তুমি কী ভাই বর্ডার পেরিয়ে
কোনোদিন কৃষ্ণনগর বা
শান্তিপুরের দিকে গিয়েছিলে?
জলঙ্গি নদীটা দেখেছো? চুর্ণী নদী দেখেছো?
সেই যে ‘দেবতার গ্রাস’ কবিতায় কবিগুরু লিখেছিলেন,
“দাঁড়ায়ে রহিল ঘাটে যত কুলনারী
অশ্রুচোখে। হেমন্তের প্রভাতশিশিরে
ছলছল করে গ্রাম চূর্ণী নদীতীরে।”
প্রভাত শিশিরে?

আমি বর্ডার পেরিয়ে একবারই
শুধু মিঠাইজান’কে নিয়ে বনগাঁ রেল স্টেশ্যন থেকে
ট্রেন ধরে শিয়ালদহ গিয়ে নেমেছিলাম,
কৃষ্ণনগর বা শান্তিপুর আমি যাইনি
তাই আমার জলঙ্গী ও চূর্নী নদী দেখা’ও হয়ে ওঠেনি…
তবে তুমি যখন বর্ডার পেরোনোর কথা কইলে
তখন আমার বুকের মধ্যে
বেশ খানিকটা রক্ত ছল্‌কে উঠেছিল, কেননা… !

কিন্তু সেকি আর এখেনে কওয়া ঠিক হবেনে…!
তবুও বলতে ইচ্ছে ক’রছে জানো…!
যশোর থেকে বেনাপোল হয়ে
সড়কপথে পেট্রাপোল পেরিয়ে
লোক্যেল ট্রেনে বনগাঁ, ঠাকুরনগর, মধ্যমগ্রামসহ
আরও অনেক দারুন অতি সাধারণ
সব স্টেশ্যন পার হয়ে শিয়ালদহ…
দু’দিন পর যোধপুর এক্সপ্রেসে করে
হাওড়া জাঙ্কশ্যন থেকে অনেক
অনেক স্বপ্নের মত মাঠ পাহাড় প্রান্তর পেরিয়ে
আগ্রা, তাজ মহল, সোনার কেল্লা
একদিন পরে স্লিপার বাসে ক’রে আজমীর শরীফ…

ঠিক এই র‍্যুট নিয়ে ২০১৩ সালের পরে
কত কতবার যেতে চেয়েছি বর্ডার পেরিয়ে, জানো…!
ওপারের সেইসব দিনরাত্রি’র প্রতিটি মুহূর্ত,
কত কথা, কত চোখ চাওয়া, কত ছোটখাটো খুনসুটি
এই ছোট্ট একটা জীবনে অন্ততঃপক্ষে
একবার হ’লেও ফিরে গিয়ে ছুঁয়ে আসতে ইচ্ছে হয়…
জানিনে আর ক’বে হবে, দশটা বছর পেরিয়ে গেল…
এখানে কিছুই কি বলা হলো? হলো না…
হয়তো কোনো একদিন বলা হবে, হয়তো হবে না…
কার কীই বা তাতে যাবে আসবে…
হয়তো ‘চূর্ণী’ নদীর তীরে গিয়ে
মন খারাপ ক’রে বসেই থাকতে হবে শুধু…

যদি তোমার পিছ-বাগানের
পঞ্চপত্রী নীললোহিত ফুল হতেম
আরও তোমায় চোখের মায়ায় ঘিরে
রোদ্দুর সুধায় ভরিয়ে দিতেম…
আমি কি জানি ছাই কিভাবে মানুষ থেকে ফুল হতে হয়…
কিভাবে কতভাবে কত সুদূ্রে গেলে
“কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা”
সুখ সুখ বোধ অপরিমেয় হবে,
কোন বেলোয়ারি চুড়িধারী
রমনীয় কায়দায় আমার চোখের আগে এসে
ঝিলমিল করলে হাসলে
আমার আর হাঁটতে এতটুকুও ক্লেশ হবে না…

আঁধারে মনছায়া ক্ষণিকে বিলীন
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ব্যথা তবু জেগে থাকে সুপ্ত মিহিন
ধু ধু মরু বুকে তুমি জলের স্মরণ
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ চোখের জলের তবে এত ছিল রঙ…!

আমি কেবল স্বপ্নেই ভাবি,
‘তোমার’ সাথে যদি আমার এ জন্মে
দেখাশোনা হয় তবে কি আর কোনো কথা হবে…!
“কি কথা তাহার সাথে? তার সাথে !”
দেখে নাও মন জুড়িয়ে,
শুনে নাও সেই মিলনের সুগন্ধি বাতাস কি বলে…!
কি রক্তবীজ তারা যেতে চায় রেখে
বাতাসে ঘাসে নীলিমার প্রতিভাসে…
এ জীবনে কি আসলেই ‘তুমি’ ছাড়া আমার কিছু আছে…!

[*বোক্যেটো (Boketto) একটি জ্যাপনিজ শব্দ যেটার অর্থ নির্দিষ্ট কিছু সম্পর্কে সত্যিই চিন্তা না করে দূরত্বে খালি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা, শূন্যচিন্তার শিল্প ]
_____________________________________________
যে কথা বলতে’ই হবে…
‘শাহ্‌নূর’ আমার ওহাইয়্যো’র ষাট পেরোনো কবিবন্ধু… বেশ কিছুদিন যাবৎই ওর মেরুদন্ডে প্রচন্ড ব্যথা… সে কবিতা পড়তে রিডিং টেবিলে বসলে আর কিছুতেই নিজে নিজে উঠে দাড়াতে পারে না… লাগাতার ওর বাগানের ম্যাজেন্টা ওয়্যেভ প্যেটুনিয়া, ক্রিসেনথেমাম, বেগ্যোনিয়া আরও কি কি ফুলকুমারীদের পরিচর্যা ক’রে ক’রে হঠাৎ এই দশা হয়েছে… ডাক্তার তাকে শুধু ফলমূল আর শাক-সবজি খেতে পরামর্শ দিয়েছে… আর বিছানা বিশ্রাম’ও মনে হয় …

ওকে কিছুটা ভালো রাখতে আমি ওকে রেখাচিত্র সংযুক্ত ক’রে কবিতা লিখে দিই, সুরময়ী সব গানের ছত্র মনে পড়াই, প্রতিটি চিঠিরই উত্তর লিখি আর ও শুধু বলে “কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা”… আসলে “পঞ্চপত্রী প্রেমের গান” কোনো কবিতা নয়, শাহ্‌নূর এবং আমার মধ্যে কথোপকথনের কিছুটা অংশ… কিছু একটা বয়স হলে’ই মানুষ শুধু হারিয়ে যাওয়ার কথা বলে এটা যেমন বড্ড ব্যথার আবার এই ফুল ফসল নদী পাহাড় সমুদ্রের পৃথিবী থেকে আমাদের সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে এটাও অনস্বীকার্য, পার্থিব একমাত্র পরম সত্য …! জন্ম-বিন্যাস-মৃত্যু এ তিন পর্বই আমাদের জীবনে আসে আসবে, পর্বত ইমারত দৌলত কিছুই স্থায়ী নয়… শুধু একটা শব্দ শেষমেষ ইথারে ঘোরাফেরা করতে থাকে… ভালোবাসি ভালোবাসি…
___________________________
সাম্প্রতিকতম – ⌠নিসর্গে নোঙর⌡
____________________________________________
দ্রষ্টব্যঃ কপিরাইটের জন্য এখানে প্রকাশিত প্রতিটি সাহিত্যকর্মই আংশিক আকারে প্রদর্শিত
N.B.: Some stanzas here have been masked to avoid copyright infringement
[Copyright © 2022-2023 | Anwar Parvez Nur Shishir – All Rights Strictly Reserved]