বাল্টিমোর গৃহিণী ও ফুল বিক্রেতা ম্যেরি এলিজাবেথ ফ্র্যে, যিনি ম্যেরি ফ্র্যে নামেই বহুল পরিচিত, যখন প্রায় তার জীবনের শেষ প্রান্তে তখনই এটা নজরে আসে যে Do Not Stand at My Grave and Weep শিরোনামের কবিতাখানি তার রচিত যেটা প্রায় ৭০ বছর যাবৎ মানব-হৃদয়কে তার প্রিয়জন হারানোর ব্যথা কমাতে সহায়তা করে এসেছে। অতীতে কবিতাখানির রচনাস্বত্ব অনেকেই দাবী করেছেন তবে ১৯৯৮ সালে Dear Abby’র জনপ্রিয় কলাম-লেখক Abigail Van Buren প্রমাণ করেন যে কবিতাখানি ম্যেরি ফ্র্যে-ই রচনা।

ফ্র্যে ১৯৩২ সালের আগে কখনই কবিতা লেখেননি কিন্তু একটি বিশেষ ঘটনা তাকে এই মর্মস্পর্শী কবিতাখানি লিখতে অনুপ্রানিত করে। ফ্র্যে এবং তার স্বামীর সাথে পরিচয় হয় এক ইহুদি তরুনী মার্গারেট শোয়ার্জকাফ্‌-এর সাথে। ফ্র্যে’র ভাষ্য অনুযায়ী, তাদের অতিথি তরুনীটি জার্মানীতে অবস্থানরত তার অসুস্থ্য মায়ের জন্য অত্যন্ত দুঃচিন্তাগ্রস্থ ছিল কিন্তু তাকে জার্মানীতে তখনই না ফেরার জন্য সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল তৎকালীণ জার্মানীতে ক্রমবর্ধমান অস্থীতিশীল ইহুদি-বিদ্বেষের কারণে। যখন তার মা মৃত্যুবরণ করে, ভগ্নহৃদয় তরুনীটি ফ্র্যে-কে বলেছিল, “আমি আমার মায়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে একটু চোখের জলও ফেলতে পারলাম না…”

কবিতাখানির চরণগুলো প্রথম লিখিত হয় একটি বাদামী রঁঙের শপিং ব্যাগের উপর। ফ্র্যে পরবর্তীতে স্মরণ করেন, তার কাছে এই কবিতার বাণী এসেছিল হঠাৎ করেই এবং জীবন ও মৃত্যু সম্পর্কে তার অনুভূতির প্রকাশ পেয়েছিল এই কবিতাখানিতে। প্রাথমিকভাবে, যখন ১২ চরণের শিরোনামহীন কবিতাখানির উন্মুক্ত ও সহজবোধ্য ভাব তার পরিচিতদের কাছে জনপ্রিয়তা পেলো তিনি তখন এটা যথেষ্ট সংখ্যক অনুলিপি ব্যক্তিগতভাবে পৌছে দিলেন। প্রিয়জন হারানোর ব্যথায় এই কবিতার উল্লেখযোগ্য প্রভাবের কারণে এটা দ্রুত আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠলো, প্রকাশিত হলো শেষকৃত্যানুষ্ঠানে বিলিকৃত অবাঞ্ছিত ও স্বাভাবিক সকল মৃত্যু-স্বান্তনামূলক পত্রের উপর আর সেটা পেরিয়ে যেতে লাগলো ভৌগলিক সীমানা আর পৌছে গেলো জাতি, ধর্ম ও সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষের কাছে যারা প্রিয়জন হারানোর ব্যথায় মুহ্যমান।

বর্তমানে এই কবিতাখানি প্রায়ঃশই প্রাকৃতিক অথবা মনুষ্যঘটিত বিপর্যয়ে ব্যাপকভাবে হতাহত মানুষের স্মৃতির উদ্দেশে প্রকাশ করা হয়ে থাকে; উদাহরণস্বরুপ, ১৯৮৮ সালে দক্ষিণ-পশ্চিম স্কটল্যান্ড-এ সংঘটিত বোমাহামলা কিংবা ২০০১ সালে ন্যু ইয়র্কে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলা।

ফ্র্যে ১৯০৫ সালের ১৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত ডেইট্যনের ওহিয়ো-তে জন্মগ্রহণ করেন, ৩ বছর বয়সে পিতামাতাকে হারান এবং ১২ বয়সে বাল্টিমোরে আসেন ও তার আত্মীয়-স্বজনের কাছে লালিত পালিত হন। ১৯২৭ সালে তিনি ক্লড ফ্র্যে’র সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি শুধু লেখালিখি করে যা উপার্জন করতেন তা বিভিন্ন দাতব্য কেন্দ্রে দান করতেন। তিনি কখনই তার লেখা কবিতা অথবা অন্য কোনো রচনার স্বত্ব সংরক্ষণ করেননি।

মহীয়সী কবি ম্যেরি এলিজাবেথ ফ্র্যে ২০০৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।


মূলঃ ম্যেরি এলিজেবেথ ফ্র্যে
অনুবাদঃ আনোয়ার পারভেজ শিশির


আমি যেখানে নেই, তুমি কেন বৃথাই খোঁজো সেখানে?
আমাকে কোথাও খুঁজে পাবে না কেননা আমি নির্ঘুম…

হাওয়ার তোড়ে আমার যাওয়া আসা
তুষার-কুঁচির হীরে চকমক অবয়বে আমি,
পাকা শস্য দানায় রোদের ঝলকানিতে,
মৃদুল শরৎ বৃষ্টিতে আমাকে কেনো খোঁজো না!

নীরব শিশু-ভোরে যখন জেগে ওঠো,
তোমার নির্জন কক্ষের বদ্ধ বাতাসে আমি মিশে থাকি;
তোমার কর্মচঞ্চল দিনের শুরুতে আমি, শেষেও…
কেনো মনে করো না, তোমার ব্যতিব্যস্ততায় আমি আছি?

পৃথিবীর মাটিতে চোখ-রাখা চক্রাকারে উড়ন্ত পাখী আমি
রাতের তারার নরম আলোয় আমাকে কেনো যে খোঁজো না, বুঝি না!

আমি যেখানে নেই, তুমি কেন বৃথাই খোঁজো সেখানে?
আমাকে কোথাও খুঁজে পাবে না কেননা আমি নির্ঘুম…
আমাকে কোথাও খুঁজে পাবে না কেননা আমি মৃত্যুহীন।

মূল কবিতাঃ

Do not stand at my grave and weep
I am not there. I do not sleep.
I am a thousand winds that blow.
I am the diamond glints on snow.
I am the sunlight on ripened grain.
I am the gentle autumn rain.
When you awaken in the morning's hush
I am the swift uplifting rush
Of quiet birds in circled flight.
I am the soft stars that shine at night.
Do not stand at my grave and cry;
I am not there. I did not die.

Mary Elizabeth Frye

Poet's photograph courtesy - http://fscenglishblog.blogspot.com/2016/04/the-friday-poem-do-not-stand-at-my.html

(কন্যা কবি - তে প্রকাশিত অনুবাদ কবিতাটি 'আনোয়ার পারভেজ শিশির' কর্তৃক সংরক্ষিত)