এই আসরের কবি শাহনূর আর নেই....!

কীভাবে কত উৎকণ্ঠায় এই পঁচিশটি দিন কাটিয়েছি, সেটা আর কাকেই বা বলবো...!

আজকে খানিকে আগেই, টুং ক'রে একটা মেসেজ আসলো, টলেডো থেকে, বজ্রপাতের মত... একটা মেসেজেই যেন গৃহ আমার অন্ধকার হয়ে গেল...

শুধুমাত্র ওর কণ্ঠটি শোনা ব্যতীত, আমার প্রিয়তম মানুষটিকে, আমি কোনোদিন চোখের সামনে দেখিনি, আর কোনোদিন দেখতে পাওয়ার আশাটাও আজকে শেষ হলো... সেই সাথে, বাংলাদেশ থেকে মার্কিন মুলুকে অভিবাসী, একটি দীর্ঘ উপন্যাসের সমাপ্তি হলো..

শাহনূরকে নিয়ে হয়তো অনেক অনেক স্মৃতিকথা রয়েছে, অনেক অনেক কবিসাহিত্যিক বন্ধুর, সেগুলো হয়তো অনেকেই প্রকাশ করবেন, হয়তো করবেন না... কিন্তু শাহনূরের লেখা কবিতা সবার সাথে একইভাবে কথা ব'লে যাবে...

বহু বছর আগে কোথাও, ওর লেখা পড়ে, মন্তব্যে শুধু "অতলান্তিক" শব্দটা লিখেছিলাম, সেই থেকে সে আমায় ভালোবেসেছিল... তারপর অজস্র অনুভব বিনিময়, প্রশ্নোত্তর, গান ও কবিতা... এতদিন বাংলাদেশে অবস্থান ক'রেও যেন আমি টলেডোর এই মহাপ্রাণ মানুষটির পায়ের কাছে ব'সে সহস্রাব্দীর পাঠ নিয়েছি... সেই পাঠশালা আজ বন্ধ হলো...

বাংলা কবিতার এই আসরেই শাহনূর-এর সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল, আমার সামান্য লেখা, মানুষটা বড্ড ভালোবেসেছিল... আজ হাজার হাজার জোনাকি স্মৃতি মনের মধ্যে নিভছে জ্বলছে...

"কবির সমাধি'ও যেন এক
বেদনাময় কাব্যের সৌধ
যেখানে কখনও না কখনও
দেখা যাবে কোনো
মহাকালের আবর্তে হৃতসর্বস্ব
তার মানস-প্রিয়া এসে
অশ্রুর অঞ্জলি দিয়ে হারিয়ে
যায় কালের গহীন অতলান্তিকে...

শুধু কারো দীর্ঘ নিঃশ্বাস রয়ে যায়...
রয়ে যায় কারো একটি খোঁপার ফুল
কিংবা মৃদুল পায়ের একটু উষ্ণতায়
জেগে ওঠে হলুদ সবুজ পাতাবাহার..."

শাহনূরের প্রিয় গানটি আজ সত্যিই খুব চোখের জলে ভেসে, কান পেতে শুনছি—

"সাসোঁ ক্যি মালা প্যে সিমরু ম্যে, পিঁ কা নাম...."

যতদিন এই দেহে প্রাণের সঞ্চার থাকবে, শাহনূর তেমনই আমার সাথে সাথেই স্পন্দিত হয়ে চলবে... ... এখন থেকে বার বারই ওকে খুঁজতে ওর কবিতায় চলে যাবো...

"কোনো হেমন্তের লাল হলুদ ম্যাপল্ পাতার বনে
কেউ যদি "এই আসছি, বেঞ্চের ওপরে আমার হ্যান্ডব্যাগটা দেখো" বলে
ঝরা পাতার স্তুপে
তার মেরুন সুগন্ধি কার্ডিগান উড়িয়ে
আকাশের নক্ষত্র হয়ে যায়?

ধু ধু তেপান্তরের প্রান্তরে চলন্ত ট্রেনের জানালা দিয়ে
কেউ যদি হাত নাড়তে নাড়তে অনেক অনেক দূর চলে যায়
যেখান থেকে আর তাঁকে দেখা যায় না?

কোনো একটা বিমান বন্দরের রানওয়ে থেকে
গর্জন করে "টেক অফ" করা জেটের পেটের ভেতর থেকে
কেউ যদি আকাশের ওপারে আকাশে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়?

দুর্দান্ত রোদ ভরা ঝিল মিল একটা দুপুরে যদি কেউ
আর কোনোদিন না আসে শিরীষ তলায়?

তখন কি কারো সমগ্র অতীত, তার বর্তমান, তার ভবিষ্যৎ
গলিত হিজল ফুল, বিল ঝিল নাম সর্বনাম, নীলাকার জামবন
এক মুহূর্তে আকাশ চেরা বিদ্যুৎ নিঃশব্দ গর্জিত বজ্রপাতে
অর্থহীন পৃথিবীটা ভেঙে জ্বলে চুরমার ভস্ম হয়ে যায়?" [অংশবিশেষ]
[কোনো এক কৃষ্ণপক্ষ রাতে / শাহনূর]