আমার শুরুটা শুরু হলো
সেই বাবার হাতেকুঁড়ি দিয়ে-
আমাদের পাড়ার বিদ্যাপিঠ্যলয়ে।
মাষ্টার মশাই বলছেন,
এক. এটা বাংলা বই।
দুই. এটা ইংরেজী বই।
তিন. এই হল অংক বই।
সন্ধ্যাই কেরসিনের প্রদীপে মায়ের হাতে
'আমার সোনার বাংলা...'
সকালে বাবার কড়া শাসনে
'একে একে এক...' 'দু গুণে চার...'
বিদ্যাপিঠ্যলয়ে পুঁশিকা মেডামের মুখে
'আই এম বয়। মাই নেম ইজ...।'
সেই থেকে কতো বিদ্যাপিঠ্যলয় পেরিয়ে
আজ আমি আমার এবং জাতির একটা কিছু হলাম!
হঠাৎ করে গুণ গুণিয়ে এক বৃষ্টির সন্ধ্যায়
বাবা-মা মিলে আমায় এনে দিলেন
আরেক সফলতার বই!
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে
সেই বইয়ের কোন ভাষা নেই
নেই অংকের সমীকরণ অথবা
ইংরেজীর নীল গম্ভীর ভাব-ভাবান্তর।
কিন্তু অসংখ্য পাতা আছে-!
সেই থেকে সেই বইয়ের পাতা
দু হাত দিয়ে উল্টায়ে পাল্টায়ে
অজানা ভাষা মুখস্থ করে চলছি নিরন্তর।
বইয়ের ভেতরে ঢোকিয়ে দিয়েছি
নিজের সমুস্থ অস্তিত্ব।
আমি এমন ভাবে বইটাকে
মুখস্থ করে যাচ্ছি রাত-বিরাতে-
যেন...!
আমাকে হতেই হবে ফাষ্ট বয়।
বইটিকে পঁয়তাল্লিশ বছর পড়ার পরেো
আজ আমি পরীক্ষা দিতে ভয় পায়।
বিদ্যাপিঠ্য ফাঁকি দেয়া ছেলেদের মতো
কুঁণটোসাঁ হয়ে বসে থাকি ঘাঁপটি মেরে
বইয়ের পাশে ঘরের ভেতর।
আজ আমি সব গেছি ভূলে-
ভূলে গেছি বইয়ের পাতার সংখ্যা
ভূলে গেছি রঙ; গন্ধ; স্বাদ।
বেমালুম ভূলে আছি চিরচেনা বইয়ের ভেতরটা।
মাঝে মাঝে আমি আঁতকে উঁঠি!
সারা জনমে আমি যে নামটি মাত্র পেয়েছি
বইটির বাহির ভেতর এবং অস্তিত্বে-
তাকে কিনা ভূলে যায়; ত-ব ত-ব মনে পড়ে!
নারী!
নাকি নারী গোত্রীয় অন্য কিছু?
নাহ্!
বইটির নাম সম্ভবত নারী।
নারী... নারী... নারী।
আবার পড়ছি-
আবার মুখস্থ করেই যাচ্ছি
নির্বিক-নিরন্তণ।