মহামান্য,

আমি দোষী, আমি পাপী-
আমি বয়ে যাওয়া নিকৃষ্ট এক প্রাণী,
দুশ্চরিত্র, লম্পট, নষ্ট ছেলে!
জেল, হাজত বা ফাঁসি-
উঠে দাঁড়ানোর শক্তি টুকু নিংড়ে, ফেলে দিন জঞ্জালে-
কুকুর, শিয়াল বা শকুনের মুখ।
আমি শয্যা নিয়েছি পর নারীর-
বঞ্চিত করেছি সংসার,
কামনা, বাসনা ,লাম্পট্যে  
আমি বয়ে যাওয়া নিকৃষ্ট এক প্রাণী,
নত জানু আমি ,
ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বসে আছি
শাস্তির অপেক্ষা-

না, না দেবদাস নই আমি -
যায়নি বেশ্যা বাড়ি,
তবে এ কথা হজম করে আমি অভ্যস্ত ত্রিশটা বছর;
বেশ্যা নাকি আমার জন্মদাত্রী মা
এক সাধারণ, মধ্যবিত্ত সংসারী মা-
যে সন্তান স্নেহে প্রশ্ন করে দিনলিপি-
সে বিধবা মার বাড়িও হারিয়ে গেল শান্তির তাগিদে-
এ কি অপরাধ! এ কি অন্যায় -
নত জানু আমি  
ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বসে আছি
শাস্তির অপেক্ষা।

না না, খুন আমি করিনি-
মেরেছি- একবার;
যখন দিন রাত শুনেছি
ঈর্ষা, অহং আর মিথ্যার বুলি-
খেয়েছি মার্ বারংবার
যারা দেখিয়েছে শ্রদ্ধা এ কীট কে,
ভেঙেছে তাদেরও ঘর-
দাবানল--শুধু দাবানল-
সন্দেহের অগ্নিদাহে জর্জরিত আমি,
সুরাপানে লিপ্ত  
এ কি অপরাধ! এ কি অন্যায় আমার –
নত জানু আমি  
ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বসে আছি
শাস্তির অপেক্ষা।


দেবদাসকে কি কেউ  ভালোবাসায় বঞ্চিত করেছিল?
হ্যা-- পারো-- পারো-
পারোর গায়ে দেবদাস হাত উঠিয়েছিলো- অভিমানে-একবার
জানেন, ওরা দুজনে ভালোবাসতো-ভীষণ
তাই, ভালোবাসায় ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জেগেছিলো- ক্ষণে ক্ষণে।
আমি কি পেলাম এমন পারোর ভালোবাসা?
প্রতিদিন কুরে কুরে খেয়ে গেল -;
হাত,পা, মুখ, হৃদয়, কর্ণ, মস্তিষ্ক
শরীরের হাড় গুলো সব নষ্ট করে
সকলকে বলে গেল চিরকাল, আমি নষ্ট পুরুষ!
দিনের আলোয়, সর্বসমক্ষে অর্ধনগ্ন করে, অশ্রাব্য ভাষায়
প্রমাণ করে দিলো, আমি নষ্ট পুরুষ-
এ কি অপরাধ! এ কি অন্যায় আমার –
নত জানু আমি
ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বসে আছি
শাস্তির অপেক্ষা।


না না, আমি শুদ্ধ নই-
গেছি অন্য নারীর সাহচর্যে-
নিজেকে নিচু করতে করতে
ছোট ভাবতে ভাবতে
স্বীকার করতে করতে
তিন দশকে আমি ক্লান্ত, শ্রান্ত- শক্তিহীন, -
মরূদ্যান কে না চায় মহামান্য-
কিন্তু কে দিলো আমায় বাঁচার অধিকার?
এ কি অপরাধ! এ কি অন্যায় –
নত জানু আমি
ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বসে আছি
শাস্তির অপেক্ষা।

আমি আজ সর্বস্বান্ত- ঘর বার হারা ,
প্রশ্ন জাগে কিছু-
যদি স্বেচ্ছা মৃত্যু বরণ করে
ছোট্ট চিরকুটে লিখে যেতাম কারণ-
পারতেন আমায় শাস্তি দিতে?

আমি যদি সমাজের সমস্ত মানুষকে চিৎকার করে বলতাম  
তার মানসিক অসুস্থতা-
আর পর মুহূর্তে আমায় উলঙ্গ করে উন্মত্ততায় সে হাসতো
পারতেন আমায় সমাজের অট্টহাস্য থেকে বাঁচাতে?

আমি যদি বাজারের ভিড়ে ,
নারীকে নিচু করে
প্রমাণ করতাম আমার যন্ত্রনা-
পারতেন শাস্তি দিতে?

কি বিচিত্র এ জগৎ - কি নিদারুণ এ শূন্যতা-
পুরুষ তো প্রাণ-মহামান্য- পুরুষ তো প্রাণ-
এক মনের মাঝে নারী-পুরুষ প্রাণের ভাগাভাগি
আইন কি বোঝে সহস্র পুরুষের যন্ত্রনা?

যদি সত্য হয় অপরাধ -
কাটুন আমার মাথা-
বলুন জোরে- আমি নষ্ট, নষ্ট, নষ্ট -
আমি বেশ্যার ছেলে,আমি ভদ্র সমাজের এক কীট!
বসে আছি উলঙ্গ হয়ে-
মুক্তির অপেক্ষা।


@অপরাজিতা