মা,

আজ কেন জানি মনে পড়ছে তোমাকে,
সেই গ্রামের বাসা, এক গোছা ভাই বোন
বাবার খেত মজুরি, তোমার ঘুঁটে বিছানো-
ইস্কুলের এক থালা ভাত, ঘরের মাতলামো-
আমার বেড়ে ওঠা যৌবন।

হ্যা গো মা- বাংলায় ভালোই ছিলাম,
দিদিমনি বলতো, চালিয়ে যাস লেখাপড়া,
শহর গিয়া দেখবি, শুনবি, জানবি, পড়বি।
ম্----স্ত বড় হবি।
হা রে! অভাগার অস্পর্ধার স্বপ্ন!

এলাম তো মা শহরে - লম্বা ট্রেন চড়ে,
অ--নে--ক দূরের সাগর পারে।
তবে ঢেউ দেখলাম হালে, হ্যা মা-
নিকাহের অছিলায় বেঁচে দিলে লোকটা-
আমার তেরোর শরীর।

অন্ধকারে খুপরিতে কেটে গেল তিন দশক।
চোখের জল গেল উবে।
সয়ে গেলাম, রয়ে গেলাম, ফিরলাম না মা-
আমায় বেচা টাকায় তোমাদের বাঁচিয়ে দিয়ে-
তোমার নষ্ট মেয়ের, মরণ।

খোদার খোদকারি ও আটকে দিলো।
সায়রাকে বড় করলে এক দিদিমনি,
আমায় শেখালে মেশিন চালানো, সায়রাকে ডাক্তারি,
আমরা আজ নষ্ট পাড়ার ক্রান্তিকারী,
দারুণ গল্প হয়ে ওঠা এ জীবন।

মা- আজ বারে বারে মনে পড়ছে তোমার কথা-

সায়রা নিয়ে এলে ভদ্র পাড়ার নতুন ফ্ল্যাটে।
সুখে কাঁদতে শেখালে আমার মেয়ে-
এ মায়াময় সাগর পারের হাওয়া,
স্নিগ্ধ রাতের তারা- নিয়নের ফুলঝুরি, ভোরের দ্যুতি,
আজ ত্রিশটা বছর পর ছুলো আমার গা।

তোমরা আর আমায় মনে করো কিনা জানিনা,
তবে নষ্ট মেয়ে ভুলবেনা লাল বাতির ঘিঞ্জি গলি-
তাই, মা- মেয়ে আর দিদিমনির হাত ধরে
আরো কত নয়না স্বপ্ন দেখে
ভোরের সূর্য।

ভালো থেকো-
আশীর্বাদ করো, যেন ইতিহাস মনে রেখে
আরো কিছু পথ চলি,আমার এ রূপকথায়-
ইতি, তোমার হারিয়ে যাওয়া জ্যেষ্ঠা,
নয়না।