আধোরাতে আমার ঘুম ভেঙে গেলে
আমি ধর্ষিতার আর্তনাদ শুনি
সম্ভ্রমের নিরাপত্তার প্রশ্নে নির্বাক হয়ে যাই
আমি কথা দিতে পারি না তোমাদের একটা সুন্দর পৃথিবী দেবো
ওরা আমাকে ধিৎকার জানায়!
আধোরাতে আমার ঘুম ভেঙে গেলে
ছোট্ট নাবালক আমার চোখের সামনে এসে আমাকে প্রশ্ন করে-
আমার সুন্দর ভেবে বেঁচে থাকার অধিকার কোথায়?
কেন এতো বৈষম্য? আমি সুকান্তের মতো কথা দিতে পারি না
তোমাদের একটা নির্মল পৃথিবী দেবো
ওরাও আমাকে ধিৎকার জানায়!
আধোরাতে রাতে আমার ঘুম ভেঙে গেলে
বৃদ্ধ পিতা মাতার বিষাদে আমার হৃদয় চৌচির হয়ে যায়
কানের কাছে এসে আমাকে শুধায়
আমি আমার ছেলে কাছে যাবো আমাকে নিয়ে যাও
আমি তাদের নিয়ে যেতে পারি না
কথা দিতে পারি না তোমাদের একটা সুন্দর পরিবার দেবো যেখানে তোমরা খুব শান্তিতে শেষ নিঃশ্বাসটুকু নিতে পারবে
ওরাও আমাকে ধিৎকার জানায়, আমি বাকরুদ্ধ হয়ে যাই!
আধোরাতে আমার ঘুম ভেঙে গেলে
আমি শ্রমিকের মিছিল শুনি
স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে
ওরা আমার কাছে এসে জানতে চায়-
আমাদের শ্রমের ন্যায্যমূল্য কোথায়?
আমি ওদের কোন প্রত্যুত্তর দিতে পারি না
বলতে পারি না তোমাদের একটা সুন্দর পুঁজিবাদহীন সমাজব্যবস্থা দেবো যেখানে তোমরা তোমাদের শ্রমের মূল্য গায়ের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বেই পাবে।
ওরাও আমাকে ধিৎকার জানায়।
আধোরাতে আমার ঘুম ভেঙে গেলে
সিঁদুর পরিহিতা এক নারী আমাকে এসে প্রশ্ন করে - সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে আজ কেন অগ্নি জ্বলে আমার ভাঙা কুঠিরে?
আমি কোন কথা বলতে পারি না
আশ্বাস দিতে পারি না একটা সুন্দর সমাজের যেখানে চণ্ডীদাসের মতো সবাই উচ্চারণ করবে-
'সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই'
অবশেষে তারাও আমাকে ধিৎকার জানায়।
ওদের ধিৎকার শুনে আমি লজ্জায় মাথা লুকোনোর চেষ্টা করি কিন্তু হায়! কোথাও তো জায়গা খুঁজে পাই না
অবশ্য ওরা ধিৎকার জানাবেই তো কারণ ওদের অধিকার আমার মতোই কেউ একজন রোজ প্রতিনিয়ত দলবেঁধে এসে হরণ করে নিয়ে যাচ্ছে
ওরা ধিৎকার জানাবেই তো কারণ আমি শব্দসৈনিকের বেশধারী হয়েও কেন তাদের কথা বলছি না। কেন? কেন? কেন?
কেন দাঁতভাঙা জবাবে ভেঙে দিচ্ছি সমাজের সকল অনিয়ম, অনাচার, দুর্নীতি.....