প্রাণের সুর
ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আনোয়ারুল হক
ছন্দ-গদ্য

অনাদি অনন্তলোকে
দ্যুলোকে-ভূলোকে-
আকাশ-বাতাস-জল-স্থল-কানন-মরু-গিরি।
প্রশান্তের অতল গহ্বরে,
অবারিত শ্যামল প্রান্তরে,
ঊষর মরুর ধূসর বালির তৃষিত অন্তরে।
দূর দিগবলয়ে- নীল নীলান্তরে।
নিশির জাগ্রত চোখে আলোকিত তারা-চন্দ্রে,
আঁধারের মহারন্ধ্রে।
চপল চটুল কিশোরীর অনুর্বর বুকে
ধ্যানাচ্ছন্ন মোহাবিষ্টের উষ্ণ চুমুকে চুমুকে।
ষোড়শীর অনাবৃত যুগলবন্ধের আদৃত পরশ-হরষ সরসে
যামিনী বক্ষে ফুটন্ত কামিনীর মৌ মৌ গন্ধে নৃত্যরত উদাসী মলয় উরসে ।
আমার কাব্য ও গানে-
জনম-জন্মান্ত আমি যাকে খুঁজে ফিরি।

যার ছবি আঁকা এই তনু মন ঘিরি’।
কামনার জনম তৃষা বুকে ধারণ করি’
যার তরে উদিয়াছি আমি কামনার বুক চিরি’।
যার তরে অনন্তকাল আমি কামনা অনলে দহি।
আর দহিত হৃদয়ে স্বপনে বিভোর রহি।
হৃদয়ের সুনীল ক্যানভাসে প্রশান্ত চিন্তনে,
নীরবে নিবৃত্তে আনমনে যার ছবি আঁকি।
সদা উৎসুক নয়নে, আপ্লুত বদনে
আমি যার অপেক্ষায় থাকি।
উদিবে কি সে ঈদের চাঁদ আঁধারের বুক চিরি?
মেঘ হয়ে ভাসবে কি সে আমার তৃষিত আকাশে- কামনা বারিবাহ?
কামনাবারি অঝরে ঝরবে কি আমার দহিত জমিনে মিটাতে দাহ?
না কি অনন্তকাল সে অধরাই রয়ে যাবে
আঁধারে লুকিয়ে দেহ?

বুকে নিয়ে তৃষা মরু সাহারার-
আমি সেই কামনা পিয়াস-
জ্বলন্ত ভিসুভিয়াস,
লঙ্ঘিয়া বিধির নিধি,
আমি নিরবধি
সদাই উন্মত্ত মহানিশা- রুদ্র উলঙ্গ,
ছিন্ন করিয়া সে ভুজঙ্গ,
পিয়াব সেই কামনা লহু
যার প্রতীক্ষায় আমি জন্ম-জন্মান্ত বহু।

আঁধার সাগরে ভাসিয়ে কামনা ভেলা
আমি তাকে খুঁজে চলেছি একেলা।
আঁধার সিঞ্চিতে আমি বুকে আলোর বহ্নি বহি,
সেই বহ্নিতে বিজলি প্রদীপ জ্বালি,
বিজলির আলোতে তাকে, চকিতে চকিতে খুঁজি
আর সে অনলে নিজে দহি।
তাকে খুঁজিতে খুঁজিতে আর দহিতে দহিতে
আমি হারিয়ে ফেলেছি জীবনের যত পুঁজি।

জীবনী ফিরে পেতে আমি মগ্ন রহি ধ্যানেতে।
চোখের বামেতে তাকিয়ে কানেতে
দূর আঁধারের ঐ গুহাতে
ভাসা ভাসা কানে দেখি বসিয়া তফাতে-
কোন এক ক্রন্দসীর কান্না।
সে কি ধ্যানলোকে রচিত আমার আত্মার আত্মীয় কেহ?
নাকি অন্য দেহ,
মনে জাগে সন্দেহ।

ধীরে ধীরে সেই কান্না ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে
শ্রাব্য সীমার আড়ে আঁধারে যায় ঢাকি’।
তাইতো আজো আমি সূর্যের আলো ধারে-
চাঁদ হয়ে আঁধার সিঞ্চে ধরা পানে অপলক তাকিয়ে থাকি।
আর বিজলি শিখার প্রদীপ জ্বেলে অনন্তকাল তাকে খুঁজি।
আর গুরু গুরু স্বরে ডাকি।
কঠোর স্বরে ফুঁৎকারি,
আর না পেয়ে বিরহ কান্নায় অঝরে ঝরি।
সেই কান্নাজলে খাল বিল নদী নালা সাগর মহাসাগর ভরি।
বারবার অনিবার, মেঘে ভাসি আর ঝরি।

কোথায় আমার সেই চিরচেনা আজও কভু নাহি দেখা
অনন্ত বরষ সরস হরিষে বরিষে চিত্তলেখা?
আমার উদাসী বাতাস-কামনাপিয়াস-মুক্ত নীলাকাশ-
স্বপ্নসহচরী স্বপনচারিণী মানস রূপকুমারী?
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ- এত জল ও কাজল চোখে