পল্লীজননী
ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আনোয়ারুল হক
মাত্রাবৃত্ত-৪+৪+৪+৪

আমাদের ছোটগাঁয়ে মাঠ-বনপ্রান্তর
সবুজের ছায়াতলে মমতার অন্তর।
সারিসারি কুঁড়েঘর সুশীতল তরুছায়
একসুতে গাঁথাপ্রাণ মমতার সমতায়।
তরুময় আলোছায় সবুজের আঙিনায়
মেঠোপথ হেঁটে যায় দূরদেশ ঠিকানায়।
চারিপাশে অবারিত শ্যামলের প্রাণ ছুঁয়ে
স্নেহাভারে নীলাচলটা যেন রয়েছে নুয়ে।
মাঠে-ঘাটে তটে-বাটে সবুজের মোহনায়
অনাদরে অবহেলে ফুটে ফুল আগাছায়।
ফসলের কোল জুড়ে অবারিত অঙ্গন
লতা-ঘাসে ফুলে-ফলে প্রাণের আলিঙ্গন।

গ্রামটির বুক চিরে ছোটনদ বয়ে বান
কূলদ্বয় রচে যায় জীবনের জয়গান।
পললিত অবারিত তটঅববাহিকায়
প্রাণপ্রকৃতি হাসে ফসলের আঙিনায়।
দুই তীরে গ্রামখানি তটিনীর মহিমায়
রূপেঘ্রাণে অপরূপা রমণীর মমতায়।
কচিকচি ধানক্ষেতে রোদেমেঘে আলোছায়
সবুজের ভেলা যেন বাতাসেতে দোল খায়।
পাকাধানক্ষেত জুড়ে সোনালি ধানের শীষে
দুঃখ সুখে হাসি কান্নার প্রাণ রয় মিশে।
বসনকোকিল কুহু কুহু গেয়ে যায় গান
হৃদয়ের নীলিমায় বইয়ে উদাস বান।
আম্রবনে আম্রফুলে অলি গেয়ে গান
ফুলঘ্রাণে উদাস হাওয়া আকুল করে প্রাণ।

ঝিরঝির বাতাসের ঝরঝর কান্নায়
বরষায় মাঠঘাট নদীতট ভরে যায়।
দুইকূল চেপে যেই তোড়ে তার ধারা বয়
নদীজল ছলকায় তীরে ঢেউ কথা কয়।
অতিজল ধরে নদী জলাধার ভুমিকায়
অবদান রেখে যায় কৃষকের জীবিকায়।
তুলেপাল তরী ধায় গেয়ে মাঝি ভাটিগান
উদাসীন ঠিকানায় ভেসে যায় মনোপ্রাণ।
জানমাল পারাপারে খেয়াঘাট মাল্লায়
মিলনের সেতু রচে তীরে তীর পাল্লায়।
বরষার জলে ভাসা পাশে ঐ ডোবাটায়
ছেলেদল করে হল চড়ে কলাভেলাটায়।
বিলে ঝিলে শতদলে শাপলা শালুক ফুলে
জলের বুকে সাদা হাসে সবুজ বৃতি খুলে।

শীতকালে মরাগাঙ, তটরেখা নেমে যায়
দুইতীর বাঁধেপ্রাণ বাঁশেবাঁধা সাঁকোটায়।
দিনভর পাখিদের কোলাহল হলাহল
আহারের বাহারেতে জীবনের ঢলাঢল।
গো-ধূলিতে বনে বনে পাখিদের কলতান
নিরাপদ আবাসনে মিলনের জয়গান।
তটজুড়ে জেগে ওঠা চরাচর এলাকায়
ফসলের বুকচুমে মনঃপ্রাণ জুড়ি’ যায়।
সরিষার বুক ফুটে হলুদের ঝরে ঘ্রাণ
চুলবুল অলি ধায় লুটে মৌ গেয়ে গান।
পরাগের মিলনের স্পন্দিত বুকপুটে
হৃদয়ের ভালোবাসা যেন শতদলে ফুটে।

রূপগুণঘ্রাণে প্রাঞ্জল প্রাণপ্রকৃতি
ঐতিহ্যকূলে রচে বাঙালি সংস্কৃতি।
জীবনের কোলাহলে হাসি কান্নায় প্রাণ
মমতার সমতায় একতায় বহে বান।
সামাজিকতামলয়ে ভুলে সব ভেদাভেদ
প্রেমপ্রীতি’র পুণ্যে ফুটে জাতিতে অভেদ।
জাতিধর্মসমতামূলে অভেদম নীতি
শামসম্প্রীতিকূলে বহে মানুষের গীতি।
জ্ঞাতির বাঁধনে ঐক্যগড়া এ গ্রামটায়
মমতার কোল হাসে অহিংস চেতনায়।
উৎসব’র ডামাডোলে জাত-বিজাত নাই
বুকেবুক হাতেহাত মিলেমিশে জ্ঞাতিভাই।

বৈচিত্র্যময় এ পল্লীজননীরূপ
প্রাণপ্রবাহে ছড়ায় বিশুদ্ধতার ধূপ।
নদীনারীপ্রকৃতি এক সোঁতে বয়ে যায়
ছবি হয়ে কথা বলে সৃষ্টির তুলিকায়।
দুঃখ সুখে কান্না হাসির রঙসংকটে
কালকবি ছবি আঁকে প্রাণপ্রচ্ছদপটে।
পল্লীজননীর এ প্রাণপ্রকৃতিভীরে,
নিজেকে হারিয়ে যেন বারে বারে পাই ফিরে।
ঢাকা, ১৭/০২/২০১৯
কপিরাইট সংরক্ষিত@anwar.com