জারজ
ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আনোয়ারুল হক
জন্ম আমার যুদ্ধোত্তর এই স্বাধীন বাংলাদেশে,
সবাই বলে জন্ম আমার পাপের জলে ভেসে।
যুদ্ধকালে মাকে আমার উঠিয়ে নিয়ে জোরে-
পাক সেনারা রাখলো বেঁধে পাপের নিঝুম পুরে।
তাদের পাপের দোসর ছিল পাশের বাড়ির মিয়া,
দেশের শত্রু তুষে তারা মা-বোনকে ঘোস দিয়া।
আমার জন্মই না কি হলো পাপে পঙ্কিল ঢেরা’,
পাপের ঢেরা রচলো যারা হয় নি তারা ফেরা’।
জারজ বেজন্মা, শব্দ দু’টি আমার অনেক চেনা,
জন্ম থেকেই এদের সাথে জমছে অনেক দেনা।
খুন ধর্ষণ দেশদ্রোহীতায় পায় নি যারা লাজ,
আমায় দেখলে তাদের তবু লাজে পড়ে ভাঁজ।
দেশের স্বার্থ সেদিন যারা বিকায় প্রলোভ কলে,
আমার ছায়া মাড়লে না কি দিনটা যায় রে জলে।
দেশকে স্বাধীন চায়নি যারা, ছিল শত্রু দলে,
স্বাধীন দেশে এরাই আবার চড়ে বসছে ছলে।
যাদের পাপে দেশের কোলটি শোকে খাঁখাঁ করে,
আমায় দেখলে তাদের মুখেই ছি ছি রবটি ঝরে।
লক্ষ যোদ্ধা শহিদ হলো যাদের রোষানলে,
উচ্চ পদে এরা এলো কোন সে মন্তর বলে?
এতো ক্ষতি হলো যাদের স্বার্থ চালের কুটে,
এরাই আবার সমাজপতি ধনে মানে ভোটে।
মায়ের মুখে লাগায় যারা কলঙ্কিনী ছাই,
নামি-দামি ঘুরছে সেই যুদ্ধাপরাধী ভাই।
আগুন দিয়ে যারা দেশের মারছে মানুষ পুড়ি’,
স্বাধীন দেশে এরাই আবার ছুটে নিশান উড়ি’।
লক্ষ মায়ের ইজ্জত হলো যাদের হাতে লুট,
মনঃপ্রাণে তাদের ঘৃণায় বাঁধি সবাই জোট।
যাদের প্রাণের দীপ শিখাতে কাটলো জাতির ঘোর,
সবাই তারা দেশের সেরা, জাতির মাথার চূড়।
নান্দি পাঠে বন্দি তাদের শত শ্রদ্ধায় নমি,
বীরাঙ্গনা দেখলে কেন আসবে তবে বমি?
যাদের ত্যাগে দেশের জন্ম তারা মহৎ, নামি,
সম্ভ্রমত্যাগী বীরাঙ্গনাই হয় নি শুধু দামি।
দেশের কালি শোষে নিয়ে হলেন যারা ম্লান,
জাতির কাছে তারাই কেন হলেন অপমান?
বীরাঙ্গনায় পায়ে দলে বীর যোদ্ধাদের গান,
পূর্ণ কভু হয় কি শোধা দেশ-প্রেমিকের দান?
বীরাঙ্গনার সন্তান আমি শোধতে মায়ের ঋণ,
বুকের রক্তে লিখবো আমি কলং’ দাতার ঘিণ।
জাতির কাছে চাই যে মায়ের ‘মুক্তি-মাতার’ মান,
নইলে এটা বীরের জাতির নয় কি অসম্মান?
নও তো তুমি ঘৃণ্য মাগো, তুমি দেশের মান,
ঘৃণ্য তারা, যারা তোমায় করছে ঘৃণা দান।
সকল সৃষ্টি হয় যে ধরায় স্রষ্টারই সকাশে
সৃষ্টি মাঝে তাঁহার ঝলক সৃষ্টি সুখে হাসে।
জন্ম কারো হয় কি ভবে ধলো নয়তো কালো
জগৎ-ভূমে মহৎ তারা কর্মে যাঁদের আলো।
লোকে যতই জারজ বলে নেই তো আমার লাজ,
জন্মই আমার দেশকে পরায় স্বাধীনতার তাজ।
জাতবিজাত ভুলে যেদিন বাজবে কর্মবীণ,
সত্যিকারে মুক্তি জাতির আসবে শোধে ঋণ।
ঢাকা, ২৫/০৭/২০১৮