কফিনবন্দী কবিতা
এবং বিষাদ সিন্ধু
আনোয়ার হোসেন বাদল
----------------------
রোজ সকালে ছোট্ট দেবতারা শিশু হয়ে আমার স্কুলে আসে
আমাকে দেখে লম্বা সালাম ঠুকে বলে 'তুমি কেমন আছো?'
তখন নিজেকে দেবতা ভাবতে ইচ্ছে হয় অথচ আমি তা নই।
খুব ভোরে ঘুমচোখে আসে কিছু কাক, মসজিদ থেকে আসেন কিছু সফেদ দাড়ি
সোনালি আভায় আসে নির্ঘুম রোদ
আমি স্নিগ্ধ বাতাস হয়ে কবিতার
বুকে রাখি হাত
কবিতা তীব্রস্বরে করে প্রতিবাদ।
তবু নকশী কাঁথার মতো বুনে চলি কবিতার জাল
যদিও কবিতা ওসব নয়
কেননা কবিতার আত্মা ও শরীর
কফিন বন্দী হয়ে নিছিদ্র কবরে আছে শুয়ে
অনন্ত ঘুমের মাঝে কাটায় প্রহর।
বিদায়ের আগে বাপজান বলেছিলেন "কবিতা ভাত দেয় না খোকা,
একটা বিষাদ সিন্ধু কর।"
তাঁকে বলতে সাহস হয়নি
বিষাদ সিন্ধুতে যোগ্যতা লাগে।
ফুটপাথের রহস্যোপন্যাস পড়ে পড়ে
নিজেকে রহস্য পুরুষ ভাবি
হিন্দি সিনেমা দেখে রোমান্টিক সাজি
কবিতায় লিখি রহস্য আর প্রেম
বিষাদের সিন্ধুতে হাবুডুবু খাই
বিষাদ সিন্ধু হয় না, পারি না লিখিতে।
একজীবনই কবিতার সাথে প্রেম
কবিতার বুকে ঘুমিয়ে গেলে
রহস্য নায়ক শার্লক আসেন,
ক্রাচবাহী কাকাবাবু,
ফেলুদা আর আসেন বাপজান
আমাকে ডেকে বলে যান
'কবিতায় কীসব লেখো ছাই পাশ
সত্য লেখ, কবিকে আয়না হতে হয়, সময়ের আয়না
যদি না পাড়ো ওসব ছাড়ো।'
মীর মোশারেফ আসেন শেষ রাতে তাঁর হাতে দামেস্কের পতাকা
আমাকে চুপি চুপি বলেন "বিষাদ সিন্ধু লিখতে হয় ইতিহাস নিয়ে
রক্তাক্ত পদ্মার ইতিহাস
দ্বাবিংশের মোশারেফ লিখবেন
তুমি কবিতায় প্রেমের বানী শোনাও।"
ঘুমভেঙ্গে গেলে দেখি তাঁরা নেই
আসলে তাঁরা আসেননি,
কেউ আসেন না
আসে শব্দ, আসে স্বপ্ন, আসে আলো অন্ধকার
আমার ঘুম ভাঙ্গে, সূর্যের রোদ উঠে
দুঃসহ রাত কাটে না, আলো আসে না, স্বপ্ন আবারো আসে দুঃস্বপ্ন নিয়ে।
--------------------
চৌরাস্তা, পটুয়াখালী
৩০/০৫/২০১৬