বাংলাভাষা আর বাঙালির দুরবস্থা:
আসরের কবি সুজিত মান্নার কবিতা “আমি বাংলাতে লিখি’’ উপর মন্তব্য করতে গিয়ে আমার কিছু বক্তব্য আপনাদের সম্মুখে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
প্রথমে আমি কবি সুজিত মান্নাকে অশেষ ধন্যবাদ দিয়ে লেখাটা শুরু করছি:
যদিও আমি চাই না লেখাটা নিয়ে অযথা বিতর্ক হোক –কিন্তু বিতর্ক হলেও আমার কোন দু:খ নেই।
এবার মূল বিষয়টিতে একটু ফিরে আসি।
বাংলাভাষা আর বাঙালির কেন আজ এই দুরবস্থা—বিষয়টা খুবই গুরুগম্ভীর-তাই সবাইকে এই ব্যাপারটা চিন্তা সহকারে ভাবার জন্য আহ্বান জানাই ।
বিষয়টা অনেক জটিল আর বিশ্লেষণ এই স্বল্প পরিসরে করা যাবে না বলে আমি শুধু বিষয়টা উত্থাপন করছি।
বৃহৎ বাংলা ভাষাভাষীর (বাংলাদেশ ও ভারতের বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ)আলোচনা এখানে করবনা আমি শুধু পশ্চিমবঙ্গ তথা বর্তমান ভারতের মধ্যেই সীমিত রাখার চেষ্টা করব।
বাংলাভাষার দুরবস্থার অন্যতম একটা কারণ হিসেবী আমি মনে রবীন্দ্রনাথের একটা লেখার ভুল বোঝা আর তার অপপ্রয়োগ করেন তদানীন্তন বামফ্রন্ট সরকার –রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য ছিল “মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের সমান’’- বামফ্রন্ট সরকার তাই শিশুকে মায়ের দুধ ছাড়া অন্যকিছু দিতে অস্বীকার করেন-যেই ভাবা তেমন কাজ –সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি পড়ানো বন্ধ করলেন স্কুল থেকে –পঞ্চম শ্রেণীতে গিয়ে শিশুরা শিখতে লাগল ইংরেজি বর্ণমালা—এক প্রজন্ম পিছিয়ে গেল –অল ইন্ডিয়া কম্পিটিশনে পিছনের সারিতে এল বাঙ্গালীরা।
এছাড়া অনেক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আছে বাঙালির পিছিয়ে থাকার জন্য তা এই স্বল্প পরিসরে আলোচনা করছি না ।
পরবর্তী সরকারের আমি তেমন সদিচ্ছা দেখি না বাঙালির পুরানো গৌরব ফিরিয়ে আনার –এটা অনেকটা পলিসি প্যারালাইসিসের মত অবস্থা।
সত্যিই আজ কজন বাংলা পড়ে আর বাংলাতে লেখে, আজকাল ইংরেজি লেখাটা ফ্যাশন, বাংলায় বলা হয়ে গেছে সেকেলে।
তবে মনে হয়, যতদিন বাংলাদেশ আছে, বিশ্বে থাকবে বাংলাভাষা।
পশ্চিমবংগে বাংলাভাষার অবস্থা মোটেই ভাল নয়, একদিকে হিন্দী আর অন্যদিকে ইংরেজির সাঁড়াশির চাপে নাস্তানাবুদ।
সত্যি কথা বলতে গেলে আমাদের ছেলে মেয়েরা এখন ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে, যদিও তার জন্য তাদের কোন দোষ দেখিনা।
তবে এখানে একটা বলে রাখি, কাজের সুবাদে আমি ভারতবর্ষের নানা জায়গায় ঘুরেছি কিন্তু দেখি অন্য প্রদেশের লোকরা তাদের ভাষা সম্পর্কে যতটা দরদী পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা এর ঠিক উল্টো, নিজকে অনেকটা উদার ভাবে!!
এ প্রসংগে একটা কথা বলে রাখি, আপনারা জানেন কিনা বলতে পারবনা : ভারত বর্ষের রাষ্ট্রভাষা হিন্দী নয়—অনেক তথ্য যাচাই করে কথাটা বলছি –আপনারা একটু যাচাই করে নেবেন –ভারতীয় সংবিধানের কোন জায়গায় রাষ্ট্রভাষা হিন্দী বলে বলা নেই।
যদিও আজকাল কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক পরীক্ষায় বাঙালীদের হিন্দী ভাষার উপর পরীক্ষা দিতে হয় কিন্তু বাংলার কোন নেতাদের কাছে সেটা কোন বিষয় নয় , মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু কিম্বা অন্য জায়গায় কিন্তু ব্যাপারটা অন্যরকম। তাহলে ভাবুন যাদের মাতৃভাষা হিন্দী তাদের অনেকটা সুবিধা হয়ে গেলনা—পরীক্ষায় সমতা কোথায় হল? প্রশ্নটা নিজেকে একবার জিজ্ঞাসা করুন।
লেখাটা পড়ে কেউ ভাববেন না আমি ইংরেজি কিম্বা হিন্দীর শেখার বিরোধী, আর সেটা মনে করলে খুব ভুল করবেন, আমার বক্তব্য হল নিজের মাতৃভাষার ন্যায্য অধিকার আদায় করা আর তার জন্য সবাইকে সচেতন করা।
এ এক বৃহৎ আলোচনার বিষয় তাই এখানেই শেষ করি।