পরিচয় আমার সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব,
প্রাণিকূলে পার্থ্ক্য আমার-
আমি নম্র,আমি সভ্য,ভদ্র-
আমি জ্ঞান-গরিমায় চির সজীব।
আকাশ -পাতাল,সাগর-পাহাড়
বিচরণ করি সর্বত্র,  সকলি খেলাঘর
আমার।
আমি মহাশক্তিধর, আমি
মহা প্রলয়ের নটবর,আমি নৃপতি!
আমি চাইলেই নতজানু হয় বিশ্ব,
দুর্গম গিরি শুয়ে পড়ে পদতলে
আমার,
পাল্টে যায় খরস্রোতা নদীর গতি!
আমি চাইলেই বিশ্ব সংসার
তছনছ করে দিতে পারি, আমার
আছে আধুনিক আণবিক মৃত্যুবাণ।
ভয়ে তটস্থ ইন্দ্র দেবতা আজ
গুটিয়ে নিয়েছে তার বজ্রবাণ।
আমি জ্বীন-পরি দেও-দানবের ভয়,
আমি প্রাণিকূলের আজ মহা সংশয়।
সাধ্য কার?কে আজ রুখে আমায়?
বিজয়ের ঝাণ্ডা হাতে চলেছি
রাত বিরাতে,
আমি মহাবীর মহা বিক্রমে
চলেছি এ ধরায়।
ভূমিষ্ঠ না হতেই মানব শিশুর
করি লিঙ্গ নির্ধারণ,
টেস্ট টিউব আর ক্লোন করেছি করায়ত্ত,
ভাবছি কোন রসায়নে প্রাণের
করব সৃজন।
কারণ, আমার আছে আধুনিক  বিজ্ঞান।
প্রকৃতিকে সাজাই আমি
নিজের খেয়াল খুশিমত,
কারণ আমি আজ মহা জ্ঞানী,
আমার আছে একদল সর্ব বিশারদ
সদায় করছে জ্ঞান দান।
আমি আজ ভুলে যাই আমারও
আছে সীমাবদ্ধতা।
শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় নিয়ে
নগ্ন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত আজ
প্রমাণ করছি মূঢ় শ্রেষ্ঠত্বের কথা।
দেখে আমার হেন মতি,হাসে
বিশ্বপতি।
মনে মনে বলছে,"ওরে,অর্বাচীন
বিশাল এ ধরায় হাজারো প্রাণিকূলে
জানিস না তুই ও যে কত হীন!
নিজের গুণকীর্তনে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে
সদা রয়েছিস মশগুল,
সৃষ্টিকূলে শ্রেষ্ঠত্বের তকমা নিয়ে
বৃথাই করছিস গণ্ডগোল।
আজ এই করোনা'র দিনে
শত বিয়োগ বেদনা মনে
ভাবছি নিরন্তর,
মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে
লাখো লোক গেল লোকান্তরে,
কিসের এত গর্ব আমার? কিসের
এত মান-অভিমান? আমি
যে আদিম বর্বর।
কিসের এত জারিজুরি? বৃথাই
আমার বাহাদুরি,কিসের আমি
জ্ঞানী-গুণী? কিসের আমি
মহাজন?
আমি তখন শ্রেষ্ঠ হতাম
যদি তাদের ফিরিয়ে আনতাম,
যারা লাখো মায়ের হারানো
বুকের ধন।
নির্লজ্জ নিকৃষ্ট বীর আমি
ক্ষুদ্র এক জীবের নিকট পরাজিত,
তবুও আমি বলছি,বিশ্ব মানবের
তরে আজ আমি লজ্জিত।।