' স্বচ্ছ শীতল জল সতত কলকল
মর্ত্যে অমৃত-ধারা;
দু’পারেই কাঁঠাল, আম-শাল-পিয়াল
বাতাস- আত্মহারা।
ঢালু নদীর পাড় মিহিন বালু্-চর
মাঠ শষ্য-শ্যামলা;
নদী-বাঁধের পর সারিতে বাঁধা ঘর
জলে- বঁধু দু’বেলা।
বর্ষায় দিনে-রাতে, লোক আঁকশি হাতে
ধরে জ্বালানি-কাঠ।
বানের পর, পড়ে পলি মাটির স্তর
খুশিতে হাসে মাঠ।
বাঁশে বাঁধা ভেলায় লগ ভাসিয়া যায়
মাঝির কণ্ঠে গীত ।
কখনও কাঁছিতে বাঁধে গাছের সাথে
এলে বালুর রুখ ;
ঘোমটি-উনুনেতে রাঁধে সে নিজ হাতে
ধূম্র করে যে খেলা।
রাত্রিটা তার কাটে অচেনা কোন ঘাটে
বিনিদ্র তার চোখ ।
তাই কী দিল আম রুকনি তার নাম;
ভাবিয়া সব দিক !
শরতে ব্যস্ত জেলে নৌকোয় দ্রুত চলে
ধরিতে জালে মাছ ।
শীতে রেমার বন কখন যে উন্মন
সূর্য উদয় হলে !
শান্ত নদীর জলে, কিশোর ছেলে মিলে
ধরে দড়ায় মাছ ।
নদীর দু’টি পারে পুরো জনপদ ধরে
হিন্দু-মুসলমান;
‘ধর্মের স্থানে ধর্ম’ বুঝে তারা- 'এ মর্ম'
গায় জীবন-গান।
এ গাঁ’র মিস্ত্রী- যতি ডাক যে পায় নিতি
মসজিদ গড়ার;
ওপারের মোতিন পলস্তারা লাগায়
এ গাঁ’র শিব-থানে ।
ওপারের আজান এপারের স্মারণ
বঁধু- আরতি যায়।
এপারে উলু-ধ্বণি ওপারে ছেলে শুনি
বসে আরবী-পড়ায়।
এমন নদী-তীরে উঠলো এক ভোরে
‘জয় মাতা’ শ্লোগান!
অবাক হয়ে সবে বলে ওঠে সরবে
এ আবার কোন গান!
স্বাধীন দেশে- ওরে! রুটি-রোজির তরে
জ্বলিছে তনু খানি !
এহেন কঠিন দিনে শুনি নি কা’রো-মুখে
আশার কোন বাণী!
তাড়াতে গোরা-সেনা ভারত- পরাধীনা
ডেকেছিল তেমনি ।
আজকে তো এমনি হওয়ার নয়ই
তবু এ আমদানি!
দুই-পারের লোকে জুটে নদীর বুকে
শপথ নেয় তারা-
কহে প্রত্যয়ে সবে ভেদ-ভাব না র’বে
যতক্ষণ আছে প্রাণ ;
রুকনি-মা'র ছেলে- একটি হিন্দু হ'লে,
অন্য- মুসলমান ।
রচনাকালঃ ১৫/০৫/২০১৯ ও
২৭/০৯/২০১৯।
______________________
* কাব্য: শ্যমলী মায়ের কোলে ;
গ্রন্থ: তুমি এলে বলে ;
কপিরাইটস্ © ২০২০ পিসি ।
.