প্রথমে কবিতার দীর্ঘ্যসূত্রতার জন্য ক্ষামা ছাইছি। খুব তারাহুড়োয় লিখছি তাই বানান সংশোধন করতে পারলাম না। নিজ গুনে ক্ষামা করবেন। এই কবিতা আমি সমাজের মুখে পদাঘাত করার জন্য লিখলাম, কবিতা মোটামুটি সবাই বুঝবে। ভালো বুঝবে যারা পশ্চিমবঙ্গে থাকে ও প্রতিদিন খবরের কাগজের পাতাটা অন্তত উল্টে দেখে। কেউ দ্বিমত পোষণ করলে আমায় তার জন্য ক্ষামা করবেন।
সেদিন যখন জেলে পাড়াতে, আঁধার রাতে
ইস্মাইলের বাড়ির ঠিক পিছনটাতে
সিদ্ কেটে ঘরে ঢুকলাম।
ইস্মাইলের বিধবা বউ, প্রবল জ্বরে
ভুল বকছিল, আর একরত্তি মেয়েটা
মায়ের সেবা করতে করতে ভিজে মাটিতে
বসেই ঘুমিয়ে গেল। ঠিক তখনই ঝাপিয়ে পড়লাম।
মেয়েটার হাত পা বেঁধে, কাপড় গুজে মুখে
কাঙালিনীর যাও বা ছিল, সকল কিছুই
লুটে নিয়ে এলাম- লোক জেগে গেছিল, তাই
মাংস দুটোর একটাকেও খেতে পারিনি-
রাগের চোটে মেয়েটার বুকে মারলাম লাথি।
ও বিবেক তুই কোথায় ছিলি!
ও তেজঃশক্তি মেয়েটাকে তো বাঁচাতে পারতি।
আরে এই তো সেদিন, অযাচিত আত্মীয় সেজে-
নীলরতনে, পুরুলিয়ার কোন্ এক পাড়াগাঁয়ের
ভিটে মাটি-থালা বাটি, সকল কিছুই বেঁচে
মরনাপন্ন এক মাত্র জোয়ান ছেলেটাকে বাঁচাতে
যে দুর্ভাগা বাপ-মা এল, ঠকিয়ে তাদের-
সকল টাকা মেরে দিয়ে, হয়ে গেলাম হাওয়া।
ও বিবেক তুই তখন কোথায় ছিলি;
ও তেজশক্তি হতভাগ্য বাপটাকে তো একটু
সাহায্য করতে পারতি।
সে দিন যখন বছর তেরোর অপরূপা সুন্দরী
মেয়েটাকে রাস্তায় দেখলাম, সে তখনও ফ্রক পরে
ওর যে দিদি, পড়লাম তার প্রেমে,
প্রেমে না ছাই, টাকার টানে।
আরে আরে, ওর বাপের নয় রে, সে পেতে তো
অনেক হ্যাপা। আগে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে-
অত মুরদ কি আর আমার আছে? আমার আছে
সোজা রাস্তা। প্রেমের টোপে চারা গেঁথে,
বড়শিতে জোড়া মাছ ধরেছি।
বোন দুটোকে একই সাথে, মোটা রকম দালালি খেতে
বেঁচে দিলাম এক নিষিদ্ধ পল্লীতে।
মেয়ে দুটোর ঐ কান্না সেদিন আমার মনে দাগ কাটেনি।
ও বিবেক তুই সে দিন কোথায় ছিলি?
ও তেজশক্তি তুই তো ওদের বাঁচাতে পারতি।
সেদিন যখন রাত-বিরাতে, বারাসাতে
মাঠের কাছে সবান্ধবে, ঐ মেয়েটার শরীরটাকে
ছিঁড়ে খেতে গেলাম, খাকি পরা সব সরকারি-
গুন্ডাগুলো চোখ খুলে অন্ধের মত দাড়িয়ে ছিল,
স্পর্ধা দেখ ভাইটার, পুরুষের মত প্রতিবাদ করে,
জানিস তো আমরা এত জন, সাহস দেখাস কোন্ সাহসে।
তারপরেতে কামদুনিতে, কলেজ ফেরতা মেয়েটাকে
এতদিনের খোয়াইশ্ মত আয়েশ করে ভোগ করলাম।
বুকের ভিতর চাপা পাথর, বীর দর্প দেখাতে চায়,
মেয়েটাকে তাই টেনে-ছিঁড়ে টুকরো করে দিলাম।
ও বিবেক তুই কোথায় ছিলি;
ও তেজশক্তি, মেয়ে দুটোকে, ওদের ভাইটাক,
তো তুই বাঁচাতে পারতিস।
জানিস তো সেদিন, সুটিয়াতে যখন মাস্টারটা
ভাষণ ঝাড়ছিল, আক্কেল দেখ লোক খেপাবে,
আমার নামে কুৎসা রটাবে। ধর্ষক, চোর
প্রতারক, মেয়ের দালাল, আড়কাঠি
আরও কত কি! বলত হয়ত আমার নামে।
বেশ করেছি, দিয়েছি ফর্সা করে।
ও বিবেক তুই তো আমায় থামাতে পারতি,
ও তেজশক্তি একটা মায়ের কোল তো বাঁচাতে পারতি।
প্রায় বছর তিনেক আগে, রাতের বেলা
খাঁকি জামা গায়ে গলিয়ে, গামছা আর হাওয়াই চটি-
পরে, বোমা বন্দুক নিয়ে গেলাম জমি ভীক্ষাদান চাইতে।
দেব না বলেছিল, তাই গুলি করেছি। অকারণে তো নয়,
যাদের বউরা এসেছিল ছুটে, তাদের সবকটারই
পোঁশাক আশাক ছিঁড়ে- তখনও জীবিত, গুলিবিদ্ধ
স্বামীর সামনেই গণধর্ষণ করেছি। যে না বলেছে তার
কোলের শিশুকে; সঙ্গমরত অবস্থায়, টেনে ছিঁড়েছি,
নয় আছাড় মেরেছি। তাও ওদের মূর্ছা যেতে দেইনি।
তাদের মধ্যে, যে নারীরা হাত পা ছুড়েছিল
তাদের নারীত্বে ভরে দিয়েছিলাম বন্দুকের নল।
সময় মত সাঁঝের বেলা, আদিবাসী কিশোরীকে
প্রানের শেষ বিন্দু পর্যন্ত, ভোগ করে জ্যান্ত আগুনে...
তারপর ঝল্সান মাংসপিণ্ড পুতে দিলাম মাটিতে।
ও বিবেক তুই সেদিন কোথায় ছিলি।
ও তেজশক্তি তুই তো ওদের বাঁচাতে পারতি।
ফাঁকা বাড়ীতে, ভিড় গাড়ীতে, তন্বী তরুণীরা
যখন আপন আপন গন্তব্যপথে- সুযোগমত
স্পর্শসুখ লাভ করি। যেখানে পারি যতটা পারি
ততটা গভীরে প্রবেশ করি। সুযোগ পেলে-
সৎব্যবহার, প্রতিবাদের চরম দশা করি।
এই তো সেদিন রাতের ট্রেনে এক গুরু নিতম্বীনি
এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে, তার পশ্চাৎদেশে-
পৌরুষত্তের উত্তেজনাকে চেপে ধরে, উপর পানে;
উষ্ণ কোমলতা খুঁজি। এর বেশী ট্রেনে আর কিছু
কি করি? তাতেও বাঁধা, নারাজ তারা। সুযোগ মত,
একটাকে তো দিলাম, ট্রেনের থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে।
ও বিবেক তুই সেদিন কোথায় ছিলি।
ও তেজশক্তি তুই তো ওঁকে বাঁচাতে পারতি।
বাধ্য হয়ে, যে মেয়েদের দূর থেকে, দেখি বসে অন্ধকারে
কেন জানি, নিজের থেকে হাত চলে যায় মূল আধারে।
যে কৈশোর গুলো যত্ন পায়নি,তাদের দিই কোকেন-
হেরোইন। আর যারা যত্ন পায় তাদের জন্য
রাজনৈতিক মগজ-ধোলাই। কলেজগুলোয় যাও।
দেখবে কেমন কায়দা করে, ভোটের নামে
কটা করে বডি পড়ে, গুনে দেখে নাও।
এত কিছুর পরেও যারা ভাবছ আমার কি?
আরে আমার তো কিছু হয় নি। আমি তো ভাল
লোক, তাই আমার হবেই বা আর কি।
কাল আসবে তাদের ভুল ভাঙার পালা।
ও বিবেক কাল কোথায় থাকবি।
ও তেজশক্তি তুই কি কাল ওঁদের বাঁচাতে আসবি।
আলিপুরের লালবাড়ীতে, চার দেওয়ালে বন্দি আমি-
ভাবছ বাইরেটা কি শান্ত আছে। খোলা চোখ,
আবার খুলে দেখ। আসার আগে রক্তবীজের
কত রক্ত দিয়েছি, মাটির বুকে ছড়িয়ে।
ভাবছ চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে-
আমার বিবেক ধীরে ধীরে, আসছে ফিরে।
ভুল ভাবছ, ও আর আসবেনা। আমায় কথা দিয়েছে।
বয়স বাড়ছে আলোর গতিতে-
শরীরের অঙ্গ গুলো, ছিনাল মেয়ের মত
বাহানা বানায় রোজ। কিন্তু বিবেক সে কোথায়?
তেজশক্তি আমায় কথা দিয়েছে, তোমরা একসাথে-
প্রতিবাদে গর্জে উঠলে ও তোমাদের বাঁচাতে আসবে,
নচেৎ নয়- আমি জানি ও জুবান খেলাপ করেনা।
আগামীর রাক্তবীজদের ঠেকাতে হলে-
আমায় নিয়ে চল- ফায়ারিং স্কোয়াডে। অথবা
আমায়, লম্বা পাটের দড়ি দিয়ে টাঙিয়ে রাখ অনন্তকাল।
---------------x--------------