তার নাম হয়তো ছিল....
না:, তার নাম নেই কোনো
সে তো সারাজীবন এটাই চেয়েছিল,
নাম দিয়ে নয়
পরিচয় দিয়ে চিনবে তাকে নায়িকা নামে।
তার নাম নায়িকা;
নাড়ি থেকে নারী হয়ে উঠে
সংসারের সমস্ত নির্যাতন নেওয়ার পরও
সমাজে রোজ ধর্ষণ হতে হতে
বিশ্বসুন্দরী পর্যন্ত
সমস্ত ভূমিকায় বসবাস করেছে সে।
অভিনয় অভিনয় হোক বা বাস্তব
প্রত্যেকের ইতিহাস সে জানে গভীরভাবে।
অভিনয় হয়েছে তাই, তার নাম নায়িকা
বাস্তবে হলেই বা কি হত?
সে তো নাম পেয়ে গেল সমস্তজীবনের বাল্যবিধবা।
তাকে বিশ্বাস করবে কে?
নিরুপায় হরিণের কথা, শিকারি পোষ্যদের জগৎে;
একদিন সে মাকড়সা দেখে ভয় পেয়েছে
আজ ভয় পায় না রাতের নিশাচরকেও;
একদিন বিশ্বসুন্দরী হতে সুন্দর নকশায় বেঁধেছে চুল
আজ সেজেছে পুরুষের মত, অর্থহীন মেয়ে;
যে মুখে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থেকে
স্বপ্ন দেখেছিল নায়িকা হওয়ার,
সেই সুন্দর মুখ এসিডে ঝলসে দিয়েছে কিছুজন;
আজ কবরের নিচে নিখোঁজ মৃতদেহের থেকেও
মূল্য নগন্য তার।
তবুও সে নায়িকা!
হ্যাঁ...নায়িকা সে..
মৃতদেহ থেকে বেঁচে উঠার চেষ্টায়
হাজার তাকিয়ে থাকা সাস্থ্যবান দর্শকের সম্মুখে
খুশি থাকার অভিনয় করতে হয় তাকে;
হিংস্র কুকুরের দৃষ্টিতে যারা
চোখের সামনে দর্পন ধ'রে ধ'রে স্মরণ করিয়ে যায়
তার মুখের ক্ষত চিহ্ন কত ভয়ানক,
অভিনয় করতে হয়, সব ভুলে আছে সে;
আয়নায় নিজেকে দেখে আর্তনাদ কি করেনি সে!
অভিনয় করতে হয়, সে নিজেকে ভয় পায় না আর।
সমাজ দ্রুত তার নাম মুছে দিয়েছে
ঘর থেকে, সংসার থেকে,
কলেজ থেকে, বান্ধব সমষ্টি থেকে;
তাকে নায়িকা সাজতে হয়েছে
আরও দশটি এসিড রচিত মুখের দিকে তাকিয়ে--
যারা পুড়ে যায় সামান্য,
দর্শকের দৃষ্টির কেরোসিন
ক্ষতস্থানে গভীরভাবে দাবানল তোলে;
অথবা যারা পুড়েছে সমস্ত ত্বকে, রুপে, রন্ধ্রে-রন্ধ্রে
ভয়ংকর রূপের যন্ত্রণা তাদের..
সেই সকল মুখের সামনে সে দর্পন তুলে ধরে;
যে দর্পনে
রুপ দিয়ে নয় পরিচয় দিয়ে মানুষ চিনবে তাদের
অধিনায়িকা নামে।
যে দর্পনে মুখ রাখতে পারেনা
এসিড দিতে আসা
মুখোসে মুখ ঢেকে যাওয়া পিশাচের দল;
তাদের মুখোশ খুলে দেবার সময় হয়েছে...
(নারীবিষয়ক)