হোটেলের দরজার এক কোণে
১৮ কী ১৯ এর এক যুবতী দাঁড়িয়ে  ,
ছোট একটা  ছেঁড়া,ফাটা ব্যাগ হাতে
চোখ দুখানা নামিয়ে, মুখখানা ঝুঁকিয়ে,
লজ্জায় লাল হয়েছে গালদুটি,
সিঁদুর মাখা সিঁথে টকটকে
যৌবনটাও উঁকি মারে কালো কাপড়ের ফাঁকে ফাঁকে।
সামনেই চলছে দর- কষাকষি ,
শেষ পর্যন্ত রুমটা হল  ঠিক
বাবুর রেটটাই হল fixed।                         ভোটারকার্ডটা বের করে
বছর ৪০ এর বাবু বলে,
“এ নাও ,নামখানা entry করো তাড়াতাড়ি ,”
কর্মচারী প্রশ্ন করে ,“আপনার সাথে
মেয়েটা  কে ওটা ? ”
শুনে বাবু বলে,“ও,,,,,,,,,ওটা,,,,,আমার স্ত্রী ”
মুচকী হেসে লোকটা বলে ,“ বাবু সবই বুঝতেছি, নামখানা যেন কী?”
বাবু বলে ,“ওর নাম,,,,, মায়াবতী ,
একান্তে রুম চাই,
চাই না কোন disturb,
খাবারটা আর দরকারী  জিনিসপত্র ,
ঠিক সময়ে যেন পৌঁছে যায়,
বার বার ডাকতে যেন না হয় ।”
বাঁ হাতের আঙুলে সিগারেটটা ধরিয়ে,
বলতে বলতে সিঁড়ি দিয়ে উঠে
চললে বাবু রুমের দিকে ।
একটা একটা পা ফেলে চলল সেও পেছন পেছন ।  

******************************
দুদিন পরে সিঁড়ি  দিয়ে
তাড়াতাড়ি নামতে থাকে বাবু,
লেগেছে টান বাড়ি  ফেরার,
ট্যাক্সিখানাও হর্ণটা মারে বার বার,
অন্যদিকে,পেছনের জনের চোখ যায় জলে ভেসে,
এক বান্ডিল টাকা পকেট থেকে বের করে,
বাবু বলে,“এই টাকাটা রাখ,
পারলে পূজোতে একটা শাড়ি কিনে পরিস
এ'নে খুচরো একশো টাকা,
তোর বাড়ি ফেরার বাস ভাড়া।”
টপটপিয়ে পড়ল জল টাকার ওপর,
চোখ নামিয়ে মেয়ে বলে,
“আসবেন কবে বাবু আবার ,,,,,,,”
“মাস পাঁচ ছয় দেরি হতে পারে,”
এই বলে খুলল ট্যাক্সির দরজাটারে।
ধীর কন্ঠে মেয়ে  বলে,“দিবেন বাবু ফোন নাম্বারটা।"
“দরকার নেয় ,এপাশে এলে,
খোঁজ পাঠিয়ে দেব তোকে আগেভাগে । ”
বলে বাবু, দরজাটা ধপ্ করে বন্ধ করে,
জোরে ট্যাক্সি ছুটিয়ে চললে বাবু  গন্তব্যস্থলে  
যবনিকা  ঘটল স্বামী-স্ত্রী র সম্পর্কের ,
বাবু একবার ও তাকালোনা পেছন ফিরে,
জলভর্তি চোখে দূর পর্যন্ত তাকিয়ে রইলে  মায়াবতী,
মনে মনে বলে ,“বাবু আর কী পড়বে মনে,
     ফেলে আসা মায়াবতীরে,,,,,?”
    
এই মায়াবতীরা চিরকালই থাকে,
বাবুদের সখের সম্পর্কে,
পরিচয়হীনতার আড়ালে,অন্ধকারে,,।
গ্রামে গঞ্জে দরিদ্রের চিতায় জ্বলা মেয়েদের,
‘মায়াবতী’  বানায় এই ভদ্র সমাজের বাবুরা,,
যদি এরা মুখ খোলে অধিকারের দাবিতে,           বাবুরাই  আবার এদের বেশ্যা ও নাম দেয়,
এই মায়াবতীরাও ,,,, ‘মা’ হয়,
       সন্তানের জন্ম দেয় ,,,,,,,,,
তবে, বাবুরা কোনদিনই এদের সন্তানের
              ‘বাবা’ হয় না    ।  

---------------------------------------------