আমি চলেছি, পথের শেষে কী আছে জানি না,  
দিগন্তের ওপারে কী অপেক্ষা করছে, তাও আমার অজানা।  
হয়তো সেখানে সূর্যের সোনালি আলোয় ভিজে থাকা এক বিকেল,  
হয়তো সেখানে ঝরা পাতার মৃদু মর্মরধ্বনি—শীতল বাতাসের পরশ।  
হয়তো সেখানে নদীর জলে রূপালি চাঁদের প্রতিচ্ছবি,  
নীরব সন্ধ্যায় জোনাকিদের মৃদু আলোর মেলা,  
কিংবা কোনো বিস্মৃত প্রান্তরে দাঁড়িয়ে থাকা একাকী এক বটগাছ,  
যার শেকড় ছুঁয়ে গেছে অতীতের গহীন স্মৃতির আঙিনা।  
আমি শুনেছি, এই পথের ধুলোবালি সময়ের গানে মিশে যায়,  
আমি দেখেছি, ক্লান্ত পাখিরা সন্ধ্যার আগে নীড়ে ফিরে যায়।  
তবু আমি হাঁটি, কারণ গন্তব্যের চেয়েও প্রিয় আমার পথচলা,  
কারণ আমি জানি, শেষ মানেই সবকিছুর ইতি নয়—  
বরং এক নতুন শুরুর আহ্বান, এক অনন্ত সম্ভাবনার দ্বার।
আমি অনুভব করি, প্রতিটি পদক্ষেপের নিচে লুকিয়ে আছে ইতিহাস,  
প্রতিটি নিশ্বাসে মিশে আছে কালের নিরব সাক্ষ্য,  
এই পথ একদিন অনেকের ছিল, আজ আমার, কাল হয়তো আর কারও,  
তবু পথের ধুলোরা থেকে যায়, বহমান বাতাসের গল্পের মতো।  
আমি জানি না, সামনে অপেক্ষা করছে আনন্দ নাকি বেদনা,  
জয় নাকি পরাজয়, মিলন নাকি একাকীত্বের দীর্ঘশ্বাস।  
তবু আমি থামি না, আমি ক্লান্তি জানি না,  
কারণ আমি চলার মাঝেই খুঁজি আমার আসল ঠিকানা।  
হয়তো একদিন এই পথের ধুলোর সাথেই আমি মিশে যাবো,  
হয়তো আমার পদচিহ্নগুলো সময়ের বালিতে বিলীন হয়ে যাবে,  
তবু আমার যাত্রার গল্প থেকে যাবে কোনো এক দূরন্ত বাতাসে,  
যে বাতাস একদিন আমার মতোই আরেক পথিককে ডাক দেবে,  
নতুন গন্তব্যের স্বপ্ন দেখাবে, নতুন পথচলার সাহস দেবে।  
আমি চলছি, নিরন্তর-নির্বিচার, অজানার টানে,  
কখনো একা, কখনো ভিড়ে, কখনো আঁধারের সীমানায়,  
এই পথের ধুলোই আমার সাথি, বাতাস আমার পথপ্রদর্শক,  
তারার আলোয় জ্বলতে থাকা এক স্বপ্ন আমার দিগন্ত।  
পাহাড়ের গায়ে লেগে থাকা কুয়াশার মতো স্বপ্নের আড়ালে আমি,  
নদীর স্রোতের মতো বয়ে চলি অনন্তের সন্ধানে।  
সময়ের ঢেউয়ের মাঝে ডুব দেই, আবার উঠে দাঁড়াই,  
আমি জানি, হারিয়ে যাওয়া মানেই শেষ হয়ে যাওয়া নয়,  
বরং নিজেকে নতুন করে ফিরে পাওয়া, নতুন গল্পের শুরু।
আমি শুনেছি, অন্ধকারের শেষেই লুকিয়ে থাকে আলো,  
বেদনাগুলোর গহীনে জমে থাকে আশার রঙিন রেখা।  
তাই আমি চলি, সময়ের স্রোতে ভেসে, দিগন্তের ডাক শুনে,  
কারণ আমার যাত্রাই আমার পরিচয়, আমার স্বপ্ন, আমার ভবিষ্যৎ।