পরাজিত সিপাহীর মতো কারাগারে বন্দী স্বপ্ন।
তবুও স্বপ্ন ছোঁয়ার ভিড়।
বিবাগী আমি সিপাহী।
দাঁড়িয়ে আছি একটি কোণে।
জাগতিক স্বপ্ন-সুখ এড়িয়ে।
পাওয়া না পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে,
পাশ কাটিয়ে যাবো–
অচেতন আমাকে ভদ্র মহিলা বহু মূল্যের
'হোয়াইট লন্ডন' পারফিউমটি,
তুলে দিয়ে বললেন–‘ঈদ মোবারক।’
অগোছালো ওই মহিলা হলেন আমার ‘মা’।
- একজন নারী।
- স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন যিনি।
সবে সবে স্কুলে উঠেছি।
ফার্স্ট পিরিয়ডের ম্যাডামকে,
ভুল করে আম্মি ডেকে ফেলায়,
ক্লাসে আমাকে নিয়ে তুমুল বিদ্রুপ।
ম্যাডাম আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন-
এই তো আর কিছুক্ষনের অপেক্ষা;
তারপরেই তোমার মা চলে আসবে।
ক্লাস ফোর পর্যন্ত তিনিই ছিলেন আমার প্রিয় শিক্ষিকা।
- একজন নারী।
- যত্ন নিতে শিখিয়েছেন যিনি।
প্রতিবার মামার বাড়ি যাওয়ার সময়,
চৌকাঠে যে আমার হাতে কুড়ি টাকা গুঁজে,
যতদূর সম্ভব চোখ চেয়ে বিদায় জানিয়ে দেয়,
সে আমার সত্তরোর্ধ্ব ঠাকুমা।
- একজন নারী।
- 'মায়া কাকে বলে?' শিখিয়েছেন যিনি।
বেহায়া ছাত্রের রোজনামচার অধ্যায়।
প্রতি দিনের ক্লাস মিস।
স্কুল ট্রান্সফার সার্টিফিকেট দিয়ে দেবে দেবে–
এমন সময় আমাকে যে মিথ্যা ডায়রিয়ায় ফাঁসিয়ে,
স্যারকে আমার মিথ্যা বেড রেস্টের কথা বলেছিল,
সে আমার স্কুল জীবনের প্রথম বান্ধবী।
- একজন নারী।
- দস্যিপনার কয়েকধাপ শিখিয়েছে যে।
আমি বুক পকেটে গোলাপ গুঁজে
মধ্যরাতের স্বপ্ন বুনে, বেড়িয়েছি তার স্টেশন।
আমি জেনে গিয়েছি-
নেই কোনো শুভ্র, নেই কোনো স্নিগ্ধ কিছু,
উর্ধ্বে তার হাতের ছোঁয়ার।
বেল ফুলের বিলাসিতায়, হেদল ফুলের কার্পেটে,
মেখেছি যার নেশা, সে আমার নতুন প্রেমিকা।
- একজন নারী।
- সময় অসময়ে হাসতে শিখিয়েছেন যিনি।
অফিস ফিরত ক্লান্ত দেহ।
নিউটাউন হতে ধুলাগড়।
অবারিত পদপিষ্ট হয়ে ফেরা ছেলেটার মাঝেও,
যে প্রথম দেখার মত একই স্নিগ্ধতা খুঁজে পায়,
সে হলো শার্টের হাতা ভাজ করা ছেলেটির - প্রিয়তমা স্ত্রী।
- একজন নারী।
- দিন শেষ ছেলেটির কাছে স্নিগ্ধতার অর্থ যিনি।
সারাদিনের ব্যস্ততা কাটিয়ে বাড়ি ফেরার মুহূর্তেই,
আব্বু সম্বোধনে এক ছুটে,
আস্টেপিস্টে গলা জড়িয়ে,
আগে থেকে বলে রাখা,
সাধের চকলেটের যে তালাশ চালায়।
সে বাড়ি ফেরা ক্লান্ত পিতার একমাত্র রাজকন্যা।
- একজন নারী।
- পিতার আর এক মুচকি হাসির কারণ যে।
মধ্য রাত্রের পিচ ঢালা রাস্তায়।
জ্বলতে থাকা নিয়ন আলোর ফ্যাকাসে ছায়ায়।
দেহ বাড়ির বাম পাশের দরজায়।
মাঝে মাঝে আমাদেরও টোকা দিয়ে দেখা উচিত।
হয়তো পুনর্বার জানবো -
‘বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি, চির-কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’