জীবন সায়াহ্নে এসে এখন কি কি মনে পড়ছে তোমার?

নিশ্চয়ই ভাবছো;
সবই ছিলো আমার নিজেরই ভুল যা করেছি গত সারাটা জীবন
আনন্দে-উল্লাসে কাটিয়েছি, তোয়াক্কা করিনি কিছু, থেকেছি অবিচল ফুরফুরে স্ফূর্তিরত
ক্ষমতার বদৌলেতে দিনকে করেছি রাত, রাতকে দিন,
অভিনব কৌশলে রাতারাতি গড়েছি সম্পদের পাহাড়  
পাচারও করেছি ভবিষ্যতের জন্য।

বছর বছর শখ করে গড়েছি বিলাসি একটা প্রাসাদ অট্রালিকা-
সে প্রাসাদে থাকার কপাল আর হলোনা আমার একদিন একটা মুহূর্ত?
পূর্ব নির্ধারিত প্রাসাদ উদ্ভোধনের দিন আজ -আমারই ধার্য করা,
পাড়াপড়শি, আত্মীয়-সব্জন, বন্ধু-বান্ধব সকলই অমোঘ উৎফুল্ল!
অনেক দিন পর একত্রে দেখা হবে সকলের সাথে
অথচ কী নির্মম পরিণতি আমি এখন চিকিৎসকের নিবিড় পরিচর্যায় চোখের পাতায় পাতায়,
কাতরাচ্ছি অবিরত, পূংখানু পূংখানু পরীক্ষা-নিরিক্ষা চলছে একের পর এক
তবুও কোনো ক্রমেই ধরা দিচ্ছেনা আরোগ্যের উপাদেয়।

তিন-দুই-এক, তিন-দুই-এক, মনে পড়ছে আজ কত কথা
ছাদের কোনে বাসা বেধেছে আজানা হাজারো মাকড়সা
সারা জীবন আদর যত্নে জমিয়েছি যে স্তুপ তা আজ আবর্জনা,
আমার জীবন রক্ষার্থে তা আজ আমার কোনো কাজেই আসছেনা-
বরং দিচ্ছে পীড়া জ্বালা যন্ত্রণা।

এখন আমার বেশ মনে পড়ছে গুরুদের উপদেশ
সেদিন মুরুব্বিদের কেনো করেছিলাম অবজ্ঞা
তাদের মান্য করলে আজ হয়ত হতোনা শারীরিক মানুষিক এমন দূর্দশা।
অতিতে আমি যা করছি তা শুধুই ভুল, পাপ আর পাপ,
কত জনের কাছে যাবো আমি এখন -
কত জনের কাছে চাবো করোজোরে ক্ষমা,  
বেশিরভাগই আজ দুনিয়া ছাড়া পরপারে বেধেছে স্থায়ী বাসা
হাতছানি দিয়ে ডাকছে আমাকেও-
ড্রইংরুমের ঝাড়বাতি, সো-পিচ মনে কি রেখেছে আমায়
সোনাদানা, অহংকার, মর্যাদা, মেডেল, আভিজাত্য!
এলসি করে এনেছিলাম ওগুলো ইউরোপ আমেরিকা থেকে।

বৈদ্যুতিক সংযোগ ছাড়া বাতি কি আলো দিতে পারে?
ঝাড়বাতি যেমন প্রাণহীন নির্বাক ভোল্টেজ ব্যতীত,
মানুষও ঠিক তেমনই অক্সিজেন ছাড়া অকার্যকর আবর্জনা।

মানুষ মরিবা মাত্র সে আর মানুষ নয়, অসার দেহ, লাশ, ফেলনা,
অথচ প্ল্যাস্টিকের পরিত্যক্ত একটা বোতল,
একটা খেলনা হলেও তার মূল্য নুন্যতম দুইআনা।

বৃহস্পতি
২৪ পৌষ '১৪২৭
০৭ জানুয়ারি '২০২১
২২ জুমাদুল উলা' ১৪৪২
ভালুকা, ময়মনসিংহ।