কবিতা :- নাকি বলেন?
কবিঃ- সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায় (পীযূষ কবি)
দাদাভাই আপনার লেখাটি বর্তমান সমাজের এক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা , এবং আপাত দৃষ্টিতে শতপ্রতিশত সঠিক আবার অন্যদিকে এর বিপরীত তথ্যও দেওয়া যায় ।
সমর্থনে :-
তুমি বেকার ছেলে কোন্ মেয়ে তোমাকে বিয়ে করবে? এই প্রশ্নের মুখে আজকে লাখ লাখ ছেলেকে পড়তে হয়। কিন্তু বেকার মেয়ে তুমি কোন্ ছেলে তোমাকে বিয়ে করবে? এই প্রশ্নের মুখে কজন মেয়েকে পড়তে হয় বলতে পারবেন? একটা চাকুরিজিবী ছেলে একটি সুন্দর, শিক্ষিত ভাল পরিবারের বেকার মেয়েকে বিয়ে করেন ,কিন্ত কোন চাকুরিজিবী মেয়েকে একটি সুন্দর শিক্ষিত ভাল পরিবারের বেকার ছেলেকে (সাধারন বেকার তো প্রশ্নই ওঠেনা) বিয়ে করতে দেখেছেন? হলেও হাজারে হয়তো একটি হতে পারে (সেখানেও হয়তো প্রেম ঘটিত কারন বিদ্যমান)। চাকুরিজিবী মেয়ে চাকুরিজিবী ছেলেকে বিয়ে করে তেলা মাথায় তেল দেন।আমাদের সমাজে এখনও কোন মেয়েকে সাধারণত বেকার বলি না বরঞ্চ চাকুরিজীবি হলে তা এক্সট্রা যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয় , বেকার শব্দটা একচেটিয়া ছেলেদের জন্যই রাখা থাকে।সরকারি চাকরিতে ৩০% সিট মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত যা কিনা ৫০% করার দিকে এগিয়ে চলেছে (বর্তমান রিপোর্ট জানা নেই) , সরকারি নিয়মে সর্বপ্রথম তিরশ জন শিক্ষিত যুবক আজ বেকার কিন্তু তার জায়গায় যে মেয়েরা চাকরি করছেন তা দিয়ে একটি বেকার পরিবারের ভরণপোষণ হবে না , শুধু ছেলেদের বেকারত্বের হার বাড়বে । সমাজের একটা দিক আবার পিছিয়ে যাবে। অন্যদিকে চাকুরিজিবী স্বামী ও চাকুরিজিবী স্ত্রী মিলে মাত্রাতিরিক্ত স্বচ্ছলতায় জীবন কাটাবে আর বহুল পরিমানে শিক্ষিত যুবক চপ ভাজবে ।
অন্যদিকে :-
মানুষ মাত্রই তার নিজের মতো করে বাঁচার অধিকার রয়েছে তা সে ছেলে হোক বা মেয়ে , লিংগ ভেদে আইন জোর করে চাপিয়ে দেওয়া কোন সময়ই এক সুস্থ সমাজের কাজ হতে পারে না । তাই যে মেয়েটি চাকুরিজীবি বা নয় সে কাকে বিয়ে করেবে বা তার পছন্দ কি রকম হবে তা একান্তই তার নিজের উপর নির্ভর করে । এছাড়াও সবচেয়ে বড় যে সমস্যা তা হলো ছেলেরা নিজেরাই অনেকে এটা মেনে নিতে পারে না , কারন দীর্ঘকাল পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বসবাস করতে করতে প্রত্যেকটি পুরুষ এক অলিখিত আইনে নিজেকে তার গৃহে প্রভু হিসেবেই দেখতে চায় । সে ক্ষেত্রে যদি চাকুরিজীবি মেয়েরা কোন বেকার ছেলে কে বিয়ে করে তাতেও তার ভবিষ্যত জীবনে নানা প্রতিকুলতাকে সামনা করতে হয় , বেকার ছেলেরা চাকুরিজীবি মেয়েকে বিয়ে করে বিপরীত রোলে কাজ করতে সমর্থ হবে না , তার আভ্যন্তরীণ প্রভুসত্বা তাকে তিলে তিলে শেষ করবে, হীনমন্যতায় ভুগতে ভুগতে সংসার হয়ে উঠবে বিষময় । সেক্ষেত্রে যে মানবিক ভাবনায় কবিতাটি লেখা তা সম্পূর্ণরূপে বিফল হবে।
যুদ্ধ আর প্রেমে যেমন কোন নিয়ম হতে পারে না তেমনি
যুদ্ধ যেমন সমানে সমানে হয় সেরূপ প্রেমও সমানে সমানে হলেই তার সার্থকতা।
**********************************
কবিতাটি নিয়ে লেখক ও আলোচক শ্রী যাদব চৌধুরীর মতামত :-
কবিতাটি পড়লাম l আলোচনাটিও পড়লাম l কবিতাটির কবি যেহেতু মন্তব্য চান নি তাই আলোচক কবি সম্বন্ধে বলি তিনি বিষয়টির উভয় দিক উল্লেখ করে সমস্যাটির প্রকৃতি চিনতে সাহায্য করেছেন l
বিষয়টি একজন চাকুরীজীবি মেয়ে একজন শিক্ষিত বেকার ছেলেকে বিয়ে করবেন কি না, তার ঔচিত্য বিষয়ে l অবশ্যই এ বিষয়ে কোনো নিয়ম থাকতে পারে না এবং থাকা উচিতও নয় l এটা সম্পূর্ণভাবে একটি চাকুরীজীবি ছেলে বা মেয়ের অধিকার সে চাকুরীজীবি নাকি বেকার ছেলে বা মেয়েকে বিয়ে করবে l যদি চাকুরীজীবি ছেলেরা বেকার মেয়েকে বিয়ে করছে তো স্বেচ্ছায় করছে l কোনো সমাজ বা আইন তাকে কিন্তু বাধ্য করছে না l সুতরাং মেয়েদেরও এ ব্যাপারে বাধ্য করা যায় না l পুরোটাই স্বতস্ফুর্ততার ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত l
আমি শুধু ভেবেছি যুগ যুগ ধরে এই বিষয়ে ছেলে বা মেয়েরা যা করে আসছে, তার পেছনে logic টা কি ? কি করার কারনে কি হচ্ছে l ছেলেরা কি করছে বলে কি পাচ্ছে l আর মেয়েরা কি করছে বা করছে না বলে কি পাচ্ছে বা পাচ্ছে না l এই বিষয়ে আমার বোঝাটা নীচে রাখলাম l এটি আমার মতামত নয় l আমার observation এবং প্রাসঙ্গিক নৈর্ব্যক্তিক logical প্রতিক্রিয়া মাত্র l সেই আলোকে এটিকে দেখতে অনুরোধ রাখলাম l
"পরিবারে মেয়েরা সর্বদা নিজেদেরকে পুরুষদের তুলনায় নিচু দেখতে পছন্দ করেন l বৈবাহিক সম্পর্ক শুরুর সময় মেয়েরা এই ব্যাপারটা প্রথমেই নিশ্চিত করেন যে, যাঁর সঙ্গে তার বিয়ে হচ্ছে, তিনি যেন তাঁর থেকে বেশী অর্থনৈতিক ক্ষমতা সম্পন্ন হন l বেকার মেয়ের বাবা চাকুরিজীবি পাত্র খোঁজেন l নিজে বেকার জেনেও মেয়েরা চাকুরীজীবি পাত্রের সঙ্গে বিয়েতে রাজি হন, কারণ এর ফলে তাঁর নিজেকে ছেলের তুলনায় ছোট দেখার ইচ্ছেটা পূরণ হয় l আবার মেয়ে যদি চাকুরীজীবি হন, বেকার ছেলেকে বিয়ে করলে পরিবারে তার মর্যাদা ছেলের তুলনায় বেশী হয় l কিন্তু চাকুরীজীবি মেয়েরা খোঁজেন তার থেকেও বড়ো চাকরি করেন এমন ছেলে l অর্থাৎ ঘুরেফিরে সেই ছেলেদের থেকে নিজেদের ছোটো করে রাখা l
মর্যাদা গাছে ফলে না l সম্মান জমিতে আবাদ হয় না l কাগজে দুকলম লিখে দিলেই এগুলি পাওয়া যায় না l এর জন্য কর্ম করতে হয় l নীতি আদর্শের পথে চলতে হয় l অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয় l মনটাকে উদার করতে হয় l সবসময় লাভে থাকব এই মানসিকতা নিয়ে চললে চলে না l গাছেরও খাবো, তলারও খাবো এই মানসিকতা নিয়ে চললে দুটোর কোনটাই জোটে না l মর্যাদা তো অনেক দূরের প্রশ্ন l
যে কোনো ব্যাপারে ছেলেদের দোষ দেয়া খুবই সহজ l আমি শুধু পরিবারে ছেলেরা যে পথে মর্যাদা পেয়ে আসছেন, মেয়েদের বলছি সেই পথ নিন l কেউ আপনাদের অসম্মান করতে পারবে না l কি করতে হবে আমি পরপর বলছি l
১) নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে, স্বাবলম্বী না হয়ে বিয়ের কথা চিন্তাই করবেন না l ছেলেরা স্বাবলম্বী না হয়ে বিয়ে করেন না l যদি করেন তাহলে তাঁর অবস্থাও শোচনীয় হয় l
২ ) বেকার মেয়েরা চাকুরীজীবি ছেলেদের বিয়ে করবেন না l করলে শ্বশুরবাড়িতে মর্যাদা পাবেন না l যদিও ১ নং পয়েন্টে বলাই হয়েছে স্বাবলম্বী না হলে মেয়েরা বিয়েতে যাবেন না l
৩) চাকুরিজীবি মেয়েরা বেকার ছেলেদের বিয়ে করার বুদ্ধিমত্তা দেখান l দেখবেন পরিবারে আপনার সম্মান কেমন তর তর করে বেড়ে যায় l গোটা সংসার অর্থনৈতিকভাবে আপনার ওপর নির্ভরশীল থাকবে l এতে সম্মান, মর্যাদা পাবেন l ছেলেদের নাকে দড়ি বেঁধে ঘুরাবেন l অনেক তো দেখলাম পুরুষতন্ত্র l এবার নারীতন্ত্র হোক না !
কিন্তু তার জন্য তো চায় উদারতা l চাকুরীজীবি মেয়েরা বেকার ছেলেদের বিয়ে করে এই উদারতা কি দেখাতে পারবেন ? ছেলেরা কিন্তু এই উদারতা প্রতিনিয়ত দেখাচ্ছে l আর সেজন্যই তো পুরুষতন্ত্র ! ভাবের ঘরে চুরি না করে সমস্যাটির প্রকৃত চরিত্র বুঝতে হবে l
আমাদের সমাজে মেয়েদের সমস্যা সেখান থেকেই শুরু হয় যখন জীবনভর তারা অন্যের পরিচয়ে পরিচিত থাকেন, এবং এই পরিচিতি-নির্ভর অস্তিত্বে মেয়েদের তরফ থেকে বিশেষ আপত্তিও দেখি না l কন্যা, ভগিনী, স্ত্রী, মা - জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে পরনির্ভরশীল এই পরিচিতিজ্ঞাপক জীবন নারীদের এক ধরনের নিশ্চয়তা দান করে, জীবনসংগ্রাম থেকে দূরে রাখে l মেয়েরা দেখি এই নিরাপদ, নিশ্চিত, সংগ্রামবিহীন, নির্দায়, পরনির্ভর আরামের জীবনকে ভালোই মেনে নেয় এবং উপভোগ করেন l কিন্তু কিছুসংখ্যক মেয়ের জীবনে এরকম প্রেমপূর্ণ, দায়িত্বশীল পুরুষ আশ্রয় জোটে না l পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যখন তার নখ, দাঁত বার করে সেই নারীর জীবনকে অমর্যাদায় ভরে তোলেন, তাঁর সাধারণ
বেঁচে থাকাকে দুর্বিষহ করে তোলেন, তখন কিছু বিচ্ছিন্ন ক্ষেত্রে নারী স্বাধীনতা, নারীর অধিকার, তার মর্যাদা রক্ষা ইত্যাদি প্রসঙ্গ নিয়ে সাময়িক কিছু চর্চা হয় l
কিন্তু নিত্য জীবনচর্যার মধ্যে দিয়ে যা করলে নারীদের মর্যাদা প্রকৃতই প্রতিষ্ঠিত হবে, সে পথে তাঁরা যাচ্ছেন না l
শুধু অত্যাচারিত নারীদের ক্ষেত্রেই নয়, সার্বিকভাবে, সাধারন নিয়মে যেদিন সমস্ত নারী আত্মনির্ভর হবার জন্য সংকল্পবদ্ধ হবেন, পুরুষ নিকটাত্মীয়দের ওপর নির্ভরশীল হবার দাস-মনোবৃত্তি ত্যাগ করতে পারবেন, সেদিন থেকেই দেশে, সমাজে নারী স্বাধীনতা, নারী মর্যাদার প্রকৃত ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে l"
*******************************