কবিতা আমার আয়না-দিঘি / অনিরুদ্ধ আলম
কবিতা হল বাতাসি বাঁশি। পাতার পাখি। আকাশি নীলে নিকানো নদীখানা
শিশিরে মাখা জড়োয়া ঝাড়। কুচো কচুরিপানা
বাদামি বাঁকে বিছিয়ে রাখা রুপোলি জলগুলো
ধবল ধুধু ধুলো
ছড়ানো পাড়া। পাড়াতে বাড়ি। বাড়িতে ঘরদোর
দোরের পাশে ধান খুঁটছে দুটো শালিকজোড়।
উঠিত জমি। জংলা জলি। উটকো টিলা জাঁকালো খোলতাই
একটা ভালো কবিতা লিখে ফেলব বলে মনটা আইঢাই।
কবিতা হল চাঁদের মতো আধা হলদে বাতাবি লেবু। লেবুপাতার ঘ্রাণ
গভীর ঘ্রাণে পরাণ আনচান
বাহারি পোকা। পাহাড়ি লতা। লতাপাতার সারি
ছড়িয়ে কাড়ি-কাড়ি
ঘেসো বাগানে সাজানো ঘাসফুল
বেনো বাতাসে আহা আউলা শাদা কাশের চুল
বাদলে বাজে রিমঝিমানো মাদল রাশি রাশি
শাপলা ফুলে হাসি।
মেঘেরা ভাবে খুব –
খোকার রাঙা জামার অই পকেটে দেবে ডুব।
কবিতা হল মেঠো পথের সুদূরপুরে একলা ছুটে চলা
বালির বুকে ঝলকে-ওঠা রোদের ঝড়ো ফলা
যমুনাজলে তারারা জ্বলে। সে-জলে নাচে নাও
বাঁও জলের বাঁকা বাঁওড়। ছায়াতে ঢাকা গাঁও
শীতের রাতে বুড়ো কাঁথার নিঝুম কড়া উম
উমে-জড়ানো ঘুম
সজনেডালে ছলকে-পড়া হাওয়া
হাওয়াতে মাখা থ্যাবড়া-মতো দাওয়া
দাওয়াতে ধান। খড়ের আঁটি। আঁটির ছড়াছড়ি
খুকুর গায়ে ছোপানো ফ্রক। যেন সে এক পরী।
কবিতা হল উঠোনকোণে উজলা লালে আঁকানো জবা। জবাতে রাখা আলো
গোলাপি শাদা কালো।
বাবার ডাক, ‘খোকন সোনা’। আদুরে বকা। মায়ের ভালবাসা
ভালবাসায় পরম স্নেহে বেশ তো আছি খাসা।
কবিতা হল হৃদয়জুড়ে দীঘল মায়া। আয়না-দিঘি রুপোলি উজ্জ্বল
কী দারুণ অপার
যেখানে দেখি বেলা-অবেলা আমার বাংলার
মুখটা অবিরল।