অপেক্ষা / অনিরুদ্ধ আলম

তুমি এলে-
এলেবেলে
মেঘবলাকা পেখম মেলে
আবিররাঙা  আকাশজুড়ে
ঘুড়ির মতো ঘুরেঘুরে
প’রে রঙিন আলোর চুড়ি
রিনঝিনিয়ে বাজিয়ে তুড়ি
বাউল হয়ে বেড়ায় খেলে।

তুমি এলে-
বেড়ায় খেলে
ডাগর ঢেউরা নদীর বুকে
চলকে ওঠে তুমুল সুখে
বাজিয়ে জলের রুপোর নূপুর
ঝুমুরতালে ছাপিয়ে দুপুর
ছুটে চলে উজান ঠেলে।  

তুমি এলে-
উজান ঠেলে
মিষ্টি হাওয়া শিসটি বাজায়।
রোদপরীরা দোল-আঙিনায়
রাঙিয়ে পা জল-আলতায়
নেচেগেয়ে
ঢেউয়ে-ঢেউয়ে ওঠে নেয়ে
রঙের ডালি দেয় যে ঢেলে।

তুমি এলে-
দেয় যে ঢেলে
বৃষ্টিধারা শীতল ঝোরা।
আনকোরা এক শিহরণে
পাতার ফাঁকে ক্ষণেক্ষণে
উতল গীতল ছন্দে মেতে
সোঁদা মাটির গন্ধে মেতে
কাঁপতে থাকে কদমজোড়া  
নীরবতা ঝেড়ে ফেলে।

তুমি এলে-
সব অবসাদ ঝেড়ে ফেলে
পরম মায়ায়  
নিঝুম নীলের নরম ছায়ায়
আলোর ঘড়া গড়িয়ে দিয়ে
কুসুম-আলো ছড়িয়ে দিয়ে
বেলাশেষে
রুপোলি চাঁদ আসে ভেসে
রেশমরেশম রঙের রেলে।

তুমি এলে-
রঙের রেলে
জোনাকিরা এসেই পাড়া  
বন ও পাহাড় দেয় পাহারা।
ফেলে-আসা জংলা কোনো বাংলো বাড়ির বারান্দাতে
নিদাঘ নিবিড় ফর্সা রাতে
হারিয়েযাওয়া বুবুর সোনার নোলক ওরা খোঁজার ছলে
ক্লান্তি এলে শোলক-বলা বকফুলে মুখ গোঁজার ছলে
মখমলি ঘাসচাদর ছেয়ে বিছায় আলো দলেদলে।
ছেঁড়াখোঁড়া ঝোপঝাড় সব মাড়িয়ে গিয়ে
পুলিনপাড়ের পাথারখানা ছাড়িয়ে গিয়ে
আবার তারা গাঙশালিকের ভরসা পেলে
বেণীবিলের শঙ্খবাঁকে এসে জোটে
রঙজলসায় মেতে ওঠে
জাফরি কেটে
আঁধার ছেটে
লাল বুটিদার মশাল জ্বেলে।

তুমি এলে-
মশাল জ্বেলে
তারার মেলা জেগে থাকে
শাটিনশাদা জোসনাশাড়ির আঁচলজুড়ে
চুমকি মেখে
উল্কি এঁকে
কাছেদূরে  
আলোর আঁকিবুকি আঁকে
একটুও নয় অবহেলে।

তুমি এলে-
অবহেলে
ধলপহরে
রঙবহরে  
রঙশিকারে ব্যস্ত ভ্রমর যায় না ভুলে
গান শোনাতে গুনগুনিয়ে হেলেদুলে
সকালসন্ধ্যে
কী সানন্দে!
নয় সে মোটেও দুষ্টু ছেলে।

তুমি এলে-
এই আমি যে দুষ্টু ছেলে
দুষ্টুমিতে রইব না আর
তোমার আমি বাধ্য হব
সাধ্যমতো
আপত্তি নেই কানমলাতে দাও-না যত।  
তোমার সঙ্গে ঝুমকো পাহাড়
ডহর বনে ঘুরব আমি  
প্রজাপতির মতো করে খুব আনন্দে উড়ব আমি।

আমি তোমার অপেক্ষাতে আজো স্বপ্নগুলো আঁকি –
আসবে তুমি এ প্রান্তরে অবুঝ সবুজ-হলদে পাখি।