মিনার- লুকিয়ে লুকিয়ে আর কত প্রেম করবি বলতো?

স্বপ্নীল- অবাক কান্ড, কি বলছিস এসব?
আমি আর ইতি সবসময় এইখানে বসে কথা বলি গল্পও করি সেটা ভার্সিটির সবাই জানে লুকানোর কি প্রয়োজন? শুধু তোরা কাছের হয়েও জানলি না।

ইতি- স্বপ্নীল আর আমি খুবই ভালো বন্ধু ওর আর আমার বন্ধুত্ব খুব গভীর। সেটা তোরা ভালোই জানিস।

তনু- আচ্ছা ঠিক আছে সেটা, তোরা তো এই সম্পর্ক টা প্রেমের রূপ দিতে পারিস, তাই না?

ইতি- চল উঠি, বাসায় গেলাম আমি, ভালো লাগছে না।

স্বপ্নীল - হ্যালো, ইতি কেমন আছিস?

ইতি - ভালো, তোর কি খবর বল.?

স্বপ্নীল - আছি ভালো, ভার্সিটির সবার এসব কথাগুলো আমার আর ভালো লাগছে না শুনতে।

ইতি- দ্যাখ আমারও পছন্দ না। স্বপ্নীল আমাদের সম্পর্ক টা আসলেই কি বন্ধুত্ব নাকি এর চেয়ে বেশি কিছু?

স্বপ্নীল - একটু জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়া, আকাশের চাঁদ টা দেখতে কেমন লাগছে?

ইতি- বাহ্ চমৎকার!!!  খুব সুন্দর.!!!!

স্বপ্নীল - আমাদের সম্পর্ক টা ঐ দূর আকাশের চাঁদের মতো। আমরা একে অপরের অনেক দূরে দাঁড়িয়ে আছি,  অনেক দূরত্ব বিরাজ করছে, এই সম্পর্ক টা তেমনি।
আবার ভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে দুজনের চাঁদ দেখার অনুভূতিটা হতে পারে আমরা খুব কাছের।
সকালে দেখা হবে,ঘুমিয়ে পড় শুভরাত্রি।

ইতি - এতক্ষণ পর তুই এলি? সেই সকালে ভার্সিটির কেন্টিনে বসে আছি তোর সাথে সিঙ্গাড়া খাবো বলে।
কোথায় ছিলি, আর সাথে উনি কে.?

স্বপ্নীল- আরে বাবা একটু চুপ কর, তোর সারপ্রাইজ। শাহীন এই হলো ইতি যার জন্য তুমি অধীর অপেক্ষা করছিলে এতটা দিন।ঠিক আছে সময় কাটা, তোরা কথা বল আর আমি সিঙ্গাড়া মধ্যে বাঁধা হলাম না।

ইতি- এসবের মানে কি স্বপ্নীল, কই যাচ্ছিস আমাকে একা রেখে? দাঁড়া বলছি~~~~~~~~

মিনার ও তনু- কি রে তোরা দুজন কই তোদের খুঁজে পাচ্ছি না। ইতি আসলো না ও কোথায়?

স্বপ্নীল - তোদের মুখ বন্ধ করার ব্যবস্থা হয়েছে, ইতির সাথে শাহীনের প্রেমের সেতু তৈরী করে দিয়ে এলাম।

তনু- কি আজেবাজে কথা  বলছিস, স্বপ্নীল কাজটা মোটেও ভালো করিস নি। বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো। দ্যাখ মেয়েদের অনেক ব্যাপারে সুচতুর অনুমান বেশ প্রবল যেটা তুই বুঝলি না। তুই যে হালকা খুশি হয়ে মনে কষ্ট রেখে এমন কাজ করলি সেটা ইতিও না বুঝে থাকবে না।

তনু ও মিনার- এই দ্যাখ দ্যাখ রিক্সায় শাহীন আর ইতি।
এই ইতি,,,ইতি,,,!! এভাবে ডাকলাম শুনলো না। কিন্তু ওরা আমাদের এড়িয়ে গেলো কেন স্বপ্নীল? দেখেও চলে গেলো।

স্বপ্নীল - দূর ইতি এমন মেয়ে না, ও হয়তো আমাদের দ্যাখে নি। তাই চলে গেলো।

তনু- নতুন প্রেমে পড়লে গোটা পৃথিবী ধোঁয়াশা আর অদৃশ্য হয়ে যায়।

স্বপ্নীল - হ্যালো, কি রে কেমন আছিস?

ইতি- ভালো আছি, তুই.?

স্বপ্নীল - তোকে খুব মিস করছি রে। এখন তুই ভালোভাবে কথা বলিস না, একসাথে আড্ডা দেওয়া হয় না, পুরো ক্যাম্পাস কেমন জানি খালি খালি লাগে। কতদিন দেখা হয় না তোর সাথে, ফোন করা ভুলেই গিয়েছিস। ফোন করলে ওয়েটিং পায় ফিরতি কল আর আসে না। প্রেমে পড়লে মানুষ এভাবে স্বার্থপর হয়?

ইতি - তুই তো এটাই চেয়েছিলি। এখন কেন এতো অভিযোগ তোর গলায়?

স্বপ্নীল - আচ্ছা ঝগড়াঝাটি বাদ দে। চল না কালকে দেখা করি, কতদিন তোর সাথে সিঙ্গাড়া আর চা খাওয়া হয় না। ক্যাম্পাসের কেন্টিনের চেয়ার দুটো আজো খালি লাগে ।
তোর কথা মিনার ও তনু সবসময় জিজ্ঞেস করে।
তনু মেয়েটি তোকে মিস করছে খুব। মেয়েটি কান্নাও করে তোর জন্য। খুব খারাপ লাগে।
কালকে দেখা করবি?

ইতি - তোর চোখের জল বোধহয় শুকিয়ে গিয়েছে ? যাইহোক সেসব কথা।  কালকে যে আমাকে শাহীন কোথায় নিয়ে যাবে বলেছিলো। আচ্ছা আমি বারন করে দিচ্ছি কল করে।

স্বপ্নীল - এই থাক থাক..!!! আমার জন্য তোদের একান্ত ব্যক্তিনির্ভর সময়গুলো নষ্ট হোক সেটা আমি চাই না।
তোর আর আমার দূরত্ব তাহলেই তোর ভবিষ্যৎ
নির্ণয় করে দিলো? এই দূরত্ব কি কখনো খুঁজে বেড়াবি.?

ইতি- দুজন মানুষের ভিন্ন জায়গায় দূর থেকে চাঁদ দেখার সময়টা খোঁজা কি বেমানান নয়.?
স্বপ্নীল, মেয়ে মানুষের মন শুধু তাকেই চাই। যে তার পাশাপাশি বসে একসাথে পূর্ণিমার চাঁদ দেখবে,ভালো বাসবে। তোর সাথে দূরত্ব আমার আর শাহীনের সম্পর্ক আরো গাড়ো নীল রঙের মতো হবে।

স্বপ্নীল - অবাক করে দিলি.!!!এখন খুব নিজেকে তৃণাচ্ছন্ন মনে হচ্ছে। আমার মতো তৃণমূল তৃতীয় ব্যক্তির অনুপ্রবেশ তুই যে চাচ্ছিস না সেটা আমার বোধগম্য হলো। তোর প্রেমে পড়া স্বাভাবিক, কিন্তু প্রেমের কারণে এই গভীর বন্ধুত্বটা যে হারিয়ে যাচ্ছে এটা চিরন্তন, আশঙ্কাগ্রস্থ হওয়ার কিছু নেই তাই না ইতি.? আমাকে মনে হয় এভাবে একাকী রাতের চাঁদ দূর থেকে একাই দেখে যেতে হবে। তোর প্রিয় রবীন্দ্রনাথের গানটা খুব মনে পড়ছে।
ভালো থাকিস রে.!! শাহীনকেও ভালো রাখিস.!!!

"" ভালোবাসি ভালোবাসি
    এই সুরে কাছে দূরে,
     জলে স্থলে বাজায়,
        বাজায় বাঁশি
ভালোবাসি ভালোবাসি ""
*********************

১৫ই অক্টোবর ২০২১।