লোকে আমাকে ঘৃণা করে। বলে, নষ্ট মেয়ে আমি।
হয়তো ঠিকই বলে। কিন্তু যারা আজ আমার
চরিত্রকে একটা প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে,
সেইসব শিক্ষিত, ভদ্র মানুষেরা জানেন কি আমার জীবনের
করুণ কাহিনী?
জানেন কি, একটি নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা,
উনিশে পা দেওয়া বি.এ ফার্স্ট ইয়ারের এক ছাত্রীর
জীবনের করুণ ইতিহাস?
জানার চেষ্টাও করেননি কোনদিন।
অথচ, দিনের পর দিন আমার দিকে ছুঁড়ে দিয়েছেন
তীক্ষ্ণ বিদ্রূপের বাণ। রাস্তায় গায়ে থুতু ছিটিয়েছেন বারবার।
আমার অপরাধ, আমি নিষিদ্ধপল্লিতে কাটিয়েছি টানা পাঁচ বছর।
তাই, আমি আজ মুক্তি পেয়েও যেন মুক্ত নয়।
কলঙ্কিত আমি, কলুষিত আমার জীবন।
আপনাদের চোখে, আপনাদের গ্রামের বি.এ ফার্স্ট ইয়ারের
এক প্রাক্তন ছাত্রী আজকের এক নামকরা বেশ্যা।
কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি স্বেচ্ছায় যায়নি ঐ নরকে।
সংসারে অভাব, তাই পাড়ার কাল্টুদাকে বলেছিলাম, একটা
চাকরির জন্য।  শুনেছিলাম, ওর সঙ্গে নাকি অনেক বড় বড়
অফিসারের, অনেক বড় বড় কোম্পানির মালিকের পরিচয় আছে।
তাই, ভেবেছিলাম যদি কিছু একটা সুরাহা হয়।
কিন্তু হায়! সেদিনই ছিল আমার চরম দুর্ভাগ্যের শুভ সূচনা।
সংসারের সচ্ছলতা আনতে, একদিন খুব ভোরে,
বাবা মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম কাল্টুদার সঙ্গে।
চললাম, গ্রাম থেকে অনেক দূরের শহরে নতুন আলোর সন্ধানে।
বাঁচার নতুন আশায়।
আমরা এসে উঠলাম শহরের ঝাঁ চকচকে এক বহুতল ফ্ল্যাটে।
কাল্টুদা, এক সপ্তাহ বাদে আমাকে বাড়ি নিয়ে যাবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে
গ্রামে ফিরে গেল। আর এলো না।
বুঝলাম, আমি বিক্রি হয়ে গেছি। এখান থেকে ফেরার সব রাস্তাই
আমার কাছে বন্ধ।
তারপর, টানা পাঁচ বছর আমার কোমল শরীরের উপর আক্রমন
শানিয়েছে দেশ বিদেশের কত ক্ষুধার্ত হায়নার দল।
আমাকে দিয়ে ঐ বহুতল ফ্ল্যাটের মালিক কামিয়েছে
কত বিদেশী মুদ্রা। বিনিময়ে আমাকে দিয়েছে দু-বেলা
আধপেটা খাবার আর রাশি রাশি গর্ভনিরোধক ট্যাবলেট।
তারপর, কোনও এক ট্যাক্সিচালকের সহায়তায়,
আমার এই গ্রামে ফিরে আসা। যদিও অনেক দেরি হয়ে গেছে।
আজ আমার বাবা, মা কেউ বেঁচে নেই। বিনা চিকিৎসায়
মারা গেছে বছর দুই আগে। ভাঙা কুঁড়েঘরে আজ আমি বেঁচে আছি
আপনাদের ঘৃণা আর অপমানের তীব্র কষাঘাত খেয়ে।
এক বেশ্যার তকমা নিয়ে।
আর কাল্টুদা, ঘুরে বেড়াচ্ছে লাল বাতি জ্বালা গাড়িতে।