স্নেহের খোকা, জানি তুই আজ আমাদের মধ্যে নেই।
আমাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে তুই চলে গেছিস
এই পৃথিবী ছেড়ে। জানিনা, তুই কেমন আছিস!
জানিস, আজও তোকে মনে পড়ে প্রতিটি মুহূর্তে।
আমি তোকে ভীষণ, ভীষণভাবে মিস করি রে খোকা।
আজ সকালবেলায়, যখন একজন ভিক্ষুক ভিক্ষা চাইতে এলো,
আমি তাকে দু-টাকার বেশি দিতে পারিনি,
কিন্তু তুই থাকলে আমি নিশ্চিত যে, তুই তাকে দশ টাকার কম
কখন-ই দিতিস না। কি করবো বল? অভাবের সংসারে
তুই-ই তো ছিলিস আমার একমাত্র ভরসা।
খোকা, আমি ঘুমের মধ্যে এখনও যেন শুনতে পাই
তোর সেই কাতর আবেদন-‘ মা, ফোন রাখছি। যুদ্ধে
যেতে হবে এবার। ভিনদেশি জঙ্গিরা ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে
ভারতমাতাকে আক্রমন করার লক্ষ্যে।
তুমি কোন চিন্তা কোর না মা। যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফিরে
আমি ঠিক তোমাকে নিয়ে পুরী বেড়াতে যাব।
রাখছি মা রাখছি।’’
ফোন রাখার পর, আমি ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করলাম-
আমার খোকাকে যেন কেড়ে নিও না ঠাকুর; ও যেন
যুদ্ধে জয়ী হয়ে বাড়ী ফিরতে পারে।
জানিস খোকা, ঠাকুর আমার সব কথা শুনল।
তোর লড়াইকে জিতিয়ে দিল। ভারতবর্ষকে লজ্জার
হাত থেকেও বাঁচাল। কিন্তু তোকে ফিরিয়ে দিলো
ফুলে ঢাকা কফিনবন্দি করে।
সেদিন রাতের খবরে যখন শুনলাম, ভারতবর্ষ থেকে
পিছু হটছে ভিনদেশি জঙ্গিরা, যখন শুনলাম,
ভারতীয় সৈন্যদের পাল্টা আক্রমনে মারা গেছে
হাজার হাজার ভিনদেশি জঙ্গি, ধ্বংস হয়েছে তাদের
বিপুল অস্ত্রভাণ্ডার, একজন যুদ্ধ বিজয়ী ক্যাপ্টেনের
মা হিসাবে গর্বে আমার বুক ভরে উঠেছিলো।
ভেবেছিলাম, তুই বোধ হয় এবার ফোন করে বলবি-
মা, যুদ্ধ থেমে গেছে। আমরা জিতে গেছি মা। এবার
আমি তোমাকে নিয়ে পুরী যাব। তুমি প্রস্তুত থাকবে কিন্তু।
যথারীতি ফোনের রিং হোল। আমি ছুটে গেলাম।
আমি ফোন ধরে বললাম, হ্যাঁ, বল খোকা, কবে আসছিস?
কিন্তু আমি তোর কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম না। এক অপরিচিত
কণ্ঠস্বর আমাকে জানিয়ে দিলো-
গতকালের যুদ্ধে ক্যপটেন বিজয় মুখার্জি শহীদ হয়েছেন।
আমি কান্নায় ভেঙে পড়লাম।
জানিস খোকা, পরের দিন সকালের কাগজে, টেলিভিশনে
প্রকাশিত হোল, যুদ্ধ শুরুর কয়েকদিন আগের লেখা
তোর সেই কবিতা-
‘সন্ত্রাস কবলিত সারা দেশ, শুনি
গুলি আর গ্রেনেডের শব্দ।
বাতাসে বিষাক্ত বারুদের বিষ,
মানুষ এখানে বড় জব্দ।
ওদের বাঁচাতে হবে তাই-
আমি উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে যাই।’’
কবিতাটা এখনও আমার রক্তে শিহরন জাগায়।
জানিস খোকা, মাঝে মাঝে মনে হয়-
তুই ঠিক –ই করেছিস। তুই এক মায়ের কোল
শূন্য করেছিস ঠিক-ই কিন্তু শূন্য হতে দিস নি
হাজার হাজার মায়ের কোল।
সাবাস ব্যাটা। সাবাস।