মুমু চৈ
আমীরুল আরহাম
(রিনাপ্লুম বাজিয়ে চলেছে মুরং যুবকেরা । সাত গ্রামের সবাই জড় হয়েছে আজ সন্ধ্যায়
মুমু চৈ-এর মেয়ে বিখ্যাত নাচিয়ে নাচন চৈ–এর নৃত্য দেখতে )
তাতা থৈ থৈ তাতা থৈ থৈ
নেচে নেচে লাফায় মুমু চৈ
নারিকেল পাতাঘেরা এক কামরায়
জানালা বেয়ে ছিটকে পড়া রোদের আলোমঞ্চে
আর মাঝে মাঝে খায় কচকচে পাহাড়ি আনারস আর গরম জল
খড়ের জানালা দিয়ে দৃষ্টি ছুঁড়ে দূরে
ঠোঁট নেড়ে নেড়ে শুকনো পাতাঝরা না-বলা শব্দ
বনের বাতাস ছাড়া বোঝে না কেউ
জল বিছুটি জ্বালাধরা গায়ে লাফায় কিংবা নাচে মুমু চৈ
নাচে স্বপ্ন নাচে জীবন নাচে মরণ তাতা থৈ থৈ তাতা থৈ
নাচে সূর্য প্রখর রোদ পড়ন্ত বিকেল গোধূলি সন্ধ্যা
তাতা থৈ থৈ তাতা থৈ থৈ তাতা থৈ
নামেনা কেউ পড়েনা কেউ ডাকেনা কেউ
শুধু ফিংঙে পেঁচা দূরের বনে কোন কেকা
দারুল গাছের পাতা চুইয়ে ছিটিয়ে পড়েছে জ্যোৎস্নার ঢেঊ
সেখানে দুবোনের গলা জড়িয়ে কান্না দেখেনা কেউ
তবু নেচে নেচে লাফিয়ে যায় মুমু চৈ একদিন প্রতিদিন
সেদিন মনে পড়ে তার ঘুঘুডাকা প্রসন্ন দুপুর
নীলাকাশ জুড়ে এক ঝাঁক চিলের পুকুর
দুপাড়ার মেয়েদের পুতুলের বিয়ে
হটাৎ একদল সেনা দৌড়ে এসে ভেঙ্গে দিলো খেলা
কুকুর ছাড়া সব লুকিয়ে গেলো পাড়া
পাড়ার মেয়েরা লুকিয়েছিলো যে যেখানে পারে
গাছে, গোলায়, ঘরের অন্ধকারে শুকনো পাতার গাদায় দমবন্ধ নিঃশ্বাসহীন
ওরা দলে বন্দুক-বলে তীব্র কর্কশ ধূর্ত নেকড়ে
তাড়িয়ে ধরেছিল হাঁস মুরগি গরু ছাগল আর মেয়েদের
তাদের বলাৎকারে
বেড়ে ওঠে কারু কারু লজ্জাঢাকা পেট
এদের কেউ জলে ডুবেছে কেউবা দিয়েছে গলায় দড়ি
একমাত্র বোনের জীবন চেয়ে ফারাচৈ দিয়েছে দাওয়া
আনারস আর গরম জল খেয়ে বিরামহীন নেচে যাওয়া
দুঃখের স্রোত বয়েছে কেবল, রক্তপিণ্ড আঁকড়ে জঠরে
শঙ্ক নদীতে রক্তসূর্য ডুবেছে দুঃখের কটোরে
জন্ম দিয়েছে আরেক স্বপ্ন মৃত্যুর হাত ধরে
অযাচিত কন্যা এসেছে অবশেষে
‘নাচন’ নাম ধরে
রক্তে নাচ জীবনে নাচ প্রতিদিন প্রতিক্ষণ নাচ নাচনের
নাচের ছন্দে মাতিয়ে তুলেছে পাহাড়ি বন
নৃত্যজয়ী নাচন ।