বেগুন ফুলের উপরে চুপটি মেরে বসে থাকা প্রজাপতির ডানায়
কচিকলাপাতা থেকে সকালের সোনারোদ ভরা বাগান
মানকচুর পাতায় তখনো মুক্তাশিশির সময় নিয়ে ভাবুক
এইমাত্র ধানতোলা আউশে, কচি আমের বোঁটায় বৈশাখী ঘ্রাণ
একদিন সেই প্রতিদিন সকালে ভেসে আসা বাউল গান
শুনতে শুনতে ঘুঁটেতে আগুণ ধরায় প্রবাসী স্বামীর তরুণী বউ
অলক্ষে সবার হাঁস মুরগি ছানাগুলো লুটিয়ে পড়েছে ধানে
শালিকের হটাত কিচিমিচি আর কুকুরের ঘেউঘেউ শুনে
ঘাড় ফিরে কেউকেউ আগুন্তুককে চিনতে চেষ্টা করে
সদ্য আঠারোর নকশালী সেই আমাকে।
অলস পায়ে এদিক-ওদিক দেখি ঘুরে ঘুরে
সেদিনের সেই বাগানটা ছোট হয়ে গেছে পুকুরটা দূরে
তাল আর নারিকেল ঘেরা পুকুরপাড় এখন শুধুই নেড়া এক স্মৃতি
আকাশ ভেসে অলক ছুটেছে পশ্চিম পাড়ায়
বাঁশ বাগানের মাথার উপরে নয়
চাঁদটাও বেঁকা করে ওঠে শিরিশের পিছনে
রাস্তাটাকে দখল করে বাড়ী তুলেছে সেদিনের সেই ন্যাংটা ছেলে মিন্টু
মজে যাওয়া পাটপচা ডোবাটার চারিদিকে প্রজাদের দেয়াল
এদিকের সেই চওড়া আভিজাত্য রাস্তাটি আর নেই
পাট বাগানের ভীতরথেকে শেয়ালকেও সন্তর্পণে ঢুকতে হই মুরগির খোঁজে
সারাদিনেও ভিক্ষা চাইতে আসেনা সহজে কোন ভিক্ষুক
সরুপথ পুকুরপাড় তেঁতুলতলার কবরস্থান হয়ে দুলুদের বাগানে পা দিতেই থেমে যাই
বেলগাছটা এতো কাছে কী করে এলো ভাবতেই শাঁক-আজানের সন্ধ্যা
ডানামেলে ওড়া হাজার পিঁপড়ে ধরায় ব্যস্ত চিল-শালিক-ফিঙের
ডানার ঝাপটায় ক্রমশই নেমে আসে গোবরপোড়া ধোঁয়ার অন্ধকার
সেদিনের সেই তুমি রান্নাফেলে মেয়েটিকে কোলে নিয়ে খুব কাছে এলে
অতিরহস্য জলচিত্র চুইয়েপড়া অন্ধকারে হাঁকরে তাকিয়ে রইলে কিছুক্ষণ
একটিও প্রশ্ন করলেনা।
দূরে কোথাও কান্নার সুর শুনে কে যেন জানান দেয়
কে যেন মরেছে বিকালে ওপাড়ায়- কী আর এমন বয়স !
দুজনের মুখে নিমছায়া অন্ধকার কারু মুখে কোন কথা নেই, একটিও না !
অতঃপর হটাত কি যেন হারিয়ে যাবার সন্ধানে পায়েপায়ে হেঁটে গেলে
আমাদেরর সেদিনের অতি কাছের ডালিমগাছটির দিকে
অনেক ‘জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে’ বলে কতো না আক্ষেপ করেছি
সবিস্ময়ে ভাবতে থাকি কী করে সেই একই গাছ একই মাটি
সময়ে এমনি সরে যায় দূরে স্মৃতির অবাধ নিঃসীম প্রান্তরে
সমস্ত শরীর মন উপচে ভরেগেলো সন্ধার চারিপাশ
ধুপধুনোলবঙ্গ পোড়া ধোঁয়ায় ক্রমশই শুনতে পাই বিদায়ী বিষাদী সানাই !