আমার কানে আওয়াজ এসেছে এদেশেও আর নেশাকোর সন্ত্রাস থাকবে না। কারণ যত যুবক তার শক্তি বেঁধে রেখেছিল আজ সেই শক্তির লোহার শিকলের বাঁধন খোলে সবাই এক সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছে। সবাই তাদের হাতের বীণা বাঁজিয়ে আসছে যারা বদ্ধ ঘরে পরে আছেন, তাদের ডাকে যাচ্ছেন আর বলছেন, এখন আর ভয় নেই আমাদের জয় হবেই-হবে। তোমরা যারা ঘরে আছ সবাই বেরিয়ে আসো। এই ধ্বনি শোনে যেন হাজার যুবক তাদের ঘরে যা ছিল তাহা নিয়েই বেরিয়ে আসছে।
যেই শিশুটিকে ছোট বেলায় তাদের মুখের দিকে খুব নজর দিয়ে তাকালে দেখা যেত কঁচি কঁচি মুখ আর এখনও মায়ের দুধের ঘ্রাণ যায় নি তাদের প্রতি আরো করুণ নজরে তাকালে ভাসিত তারা যেন যিশু। সেই শিশুরা কি বেঁচে যাবে ঝুঁকিপূর্ণ নেশার হাত হতে? তারা কি শান্তিতে জীবন চালাতে পারবে এবং একটি দেহ ঘর ফুল দিয়ে মন মতো করে সাজিয়ে নিতে পারবে? এই নেশার কারণে যারা পিত্র-মাতৃ পরিচয় দিতে পারে না, সমাজ থাকলেও যারা সমাজ হতে বঞ্জিত তাদের এবার মুক্তি হবেই। আর তাদেরকে মুক্তির পথে নিয়ে আসার জন্য এক হয়ে গেছে হাজার তরুণের শক্তি। মুক্তি এবার হবেই যারা এখনও ভীরুতার ভাব রেখে পালিয়ে আছেন তারা অতি শীঘ্রই ভীরুর বাঁধন ছিঁড়ে বেরিয়ে আসুন। একটি আঘাত পেয়ে সেই যন্ত্রনার কারণে ঘরে না ফিরে বরং তাদের প্রতি উল্টো বলুন, আমি হাজার আঘাত গাত্রে লয়ে যুদ্ধ চালিয়েই যাব। আমাকে আরো বাঁধো-কাঁটো-আমার গা হতে রক্ত ঝড়াতে ঝড়াতে সমস্ত শরীর রক্তাক্ত করে পেল, তবুও আমরা হার মানিব না। আমরা আমাদের মুক্তির গান গেয়েই যাব। আমরা আদি-বাঙ্গালী বীর। আমরা আদি-বাঙ্গালী বীর।
_________________________________________________________________________________
কোন মুক্তির ধ্বনি বাঁজিল ওরে উর্ধ্ব গগনে
ওরে বীর-গামী যুবকরা চল রণসি নিয়ে।
মম ভাইকে খাওয়ালো মদ বোনকে চোষে
মাথায় আকাশ ফেলে দেশকে নিল শেষে।
ঐ দিনের কলরব—
তোমার পরে মনে! প্রিয় হারা কত শিশু!
কঁচি কঁচি মুখ তার দু’দাঁতে হাসি-যেন যিশু।
স্বপ্ন ভরা টলমল উতল পাগল মন
ভাসিয়ে সিন্ধে ভ্যালা নিক্কনে নাচবে চরণ।
তবে আজ কেন সেই শিশু ধরিল- নেশা
কে শিখালো তাকে বদ চরিত্রের পেশা?
যারা সমাজে রক্ত পিপাসী শুকনি
কঁচি হাতে নেশা তুলে দেয়- তারা অমানুষী।
তার জল ভরা নয়ন কোণে কোণে
বল; কে নষ্ট করিল ফুল- পুষ্পিত কাননে?
বাঁচাতে তাদের কে আসে—
এ সুন্দর ভুবনে আমি নেশা বিদ্রোহী
এ ধ্বনি ক’জনের মুখে, আছে ক’জন এ মহী।
আমরা তেড়িয়া মুক্তিয়োল্লাসে- যত নর-নারী
রণসি নিয়ে যুদ্ধগামি- কে রে এত কান্ডারী?
কোটি কোটি যুবকের ভিড়ে- নেশা টলমল
মরনের বিষ-পথ দিয়ে কেমনে চলে ভীরু দল।
নেশা গ্রাসে কেন রে বাঙ্গালী সন্তান
কোন সুখে করিস তোর জীবন-মরনে দান।
টুকাই হতে ধনবান ভয় গোপনে অভ সবে
আসছে কালাপাহাড় পালাবে এখন তবে।
তাই মুক্তি সুখে—
ঐ গগন সীমায় মাতাল ধ্বনি উঠিল রণ-কন্ঠে,
ওরে পালাতকরা বেরিয়ে আয় গন্ডে।
মাতালদের ঐ নটিনী পাড়ায় বীনা-সাদী দান
জন্মিলে টুকাই পরিচয়হীন দিব্য যারজ সন্তান।
ঘটিবে কেন! এমন ঘটনা এ পবিত্র দেশে?
চোষে খায় কারা মম বোনদের!কোন রাক্ষুসে;
খায় যারা নেশা- বেসহ্য উতল যৌবন পাগলে
তারাই জন্মায় টুকাই সন্তান মানব জঙ্গলে।
নেশা- প্রতিকার করিতে হবে ভব হতে
নয়তো লক্ষ টুকাই হবে এ পৃথিবীতে।
ওরে যুবক দল! আর কত থাকিবে বদ্ধ হয়ে
হাতের বাঁধন- নয়ন আঁধার- আপন দিক চেয়ে।
মুক্তির ব্জন্য খুঁজে মহা-ছায়ায়
দল বেঁধে আয়- একলা হয়ে সঙ্গীহীনা চল
ওরে আয় আয় তোরা আয়।
ভয় নেই ভয় নেই মৃত্যুতে মুক্তি দান
শঙ্খ ধ্বনি কণ্ঠ জাগিল এ আহবান।
আসিবেই এবার আসিবেই নৃত্য প্রভাত
নেমেছে সবাই রাজপথে বীর তরুণ-প্রাত।
এসো আরো- বেঁধে গন্ডে দল- দলে
ঝিলিমিলি চাঁদনী রজনী আড়ালে।
ভব সাগরে খেয়ে দোল উর্মি মাথায়
মরন সঙ্গী করে—
ওরে আয় আয় তোরা গন্ডে গন্ডে আয়।