ফুটন্ত একটি পুষ্পিত জীবন গিয়েছিল শহরে
জ্ঞান অন্বেষণে ভরে ফিরে আসবে নিজ ঘরে।
বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে এখন সে নেশাকোর আহসান
পিতার হাতে বিষ পানে দিতে হলো প্রাণ।
সর্বদা, এক যে ছিল মুক্তা গড়া স্নেহ তনয়
পিতা-মাতা হীন একদিনেও রহিত না নিলয়।
বয়স ছিল অল্প তার কঁচি কঁচি দু’মাখা দাঁত
হাসিলে মুখে অর্ক জাগিত নৃত্য রজনী-প্রভাত।
হঠাৎ সে লঙ্গিয়ে যা মেট্রিক পরীক্ষায়
পিতার স্বপ্ন গড়াবে উজ্জ্বল জীবন,
তাই পাঠাবে সন্তানকে স্নেহ ভরে ঢাকায়।
তা শোনে তনয়—
আহসান বসে বসে বট-তলে গোপনে কাঁদে
মাতৃ হারা দুঃখ যেন মালা হলো বিঁধে।
কেমনে যাব পিতা ছেড়ে বহু দিগন্ত দূর
প্রিয় হারা মায়া যে- বিঁধে হৃদয় ঘর।
কি করিবে মা? কি করিবে বাবা আর পুতুল
জগৎ দ্বারী জীবন তো দিলে! মায়া ভুল।
আমার অজান্তে বোধয় কাঁদিবে ধোকে ধোকে
মায়ের দুঃখ সহ্যহীন- অশ্রু দেখে চোখে।
ভরিয়া দুঃখ হৃদ-পুঁড়ে—
যেতে হবে তবুও তাদের ছেড়ে অনন্ত দূরে।
বাবার স্বপ্ন যদি হয় ব্যর্থ মম তব দোষী
বক্ষে বেঁধে দুঃখ পাথর তবুও করিব তাকে খুশি।
এই ভেবে আহসান ফিরে গৃহ জল নেত্র-কোণে
সন্তানের জল বাবা দেখে সবেই বোঝে ফেলে।
বাবা তাই—
শহরে তুই যাবিনা! কি তোর আঘাত
চোখের জলে আহসান খোলে বলিল বাথ।
স্বপ্ন ভরা পিতা জেগে ধমকে দিল তারে
কাঁদিয়া আহসান জল ফেলে মায়ের আচল ধরে।
শহরে গিয়ে আহসান—
উদাসী চোখে জল ভরে মুমূর্ষ প্রাণ।
আসিয়াছি শহরে এই পহেলা-প্রথম বার
অচেনা পথ-ঘাট না জানা কত ভাড়।
মরিয়া মন কাঁদিয়া অধর সঙ্গীহীনা রুমে
এ কেমন মায়া ধ্বনি! ঝুমঝুমে বাঁজে।
কয়েক কাল পর-
গিয়েছিল কলেজে মায়া মায়া নিয়ে অধর।
বদমাসের দল-প্রীতিই ভরে নেয় ছাদে
ভয় তাহার সঙ্গী হলো বক্ষে বিঁধে।
ভন্ডরা! জোরে ধরে ওষ্ঠ খোলে গ্রাস নেশা
চমকে আহসান চিতে পরে- নেই কোন দিশা।
সেই যে ছিল এক মায়াবী রুপসী অবলা
কোলে তুলে নিয়ে যায় নিজ ছোট বাসা।
জাগিয়া আহসান অবলা তার শির ধরে
লজ্জায় ঘুমটো-বক্ষে জমে বড্ড ভূধরে।
কেঁদে কেঁদে ফিরে আসে নিজ নীড়ে
শুয়ে চিন্তায়- কয়নি কাউকে জ্বলে ধীরে।
কাটিয়া যায় দিবা-রজনী আরো কত দিন
নীড় জ্বালায় বুকে কষ্ট মন ভাঙ্গা অতি-ক্ষীণ।
হঠাৎ একদিন ভন্ডরা এসে ভোর রাতে
বোকায় ভুলিয়ে নেশার ইঞ্জেকশন দিল হাতে।
আহসান জ্বিমে জ্বিমে ঝুলে ঘুমিয়ে
রাতেও হয়নি ঘুম- চোখের পাতা খেলে চেয়ে।
আরো দশটি।– ঘটিল অভ্যাস
নেশার চরণে আহসান এখন মহা- ক্রীতদাস।
যায়নি পুরে নিতে হবে নেশা সনে ভয়ে
নেশার জগতে নবীন- পেলিল চরণ উদয়ে।
বহুকাল বহু গ্রাসে নেশা ক্ষীণ গাঁ- মুমূর্ষ একা
বাঁচা এখন অসম্ভব দেয়নি তবুও কারো দেখা।
থম-থমে ঘুরে বেড়ায় অলি-গলি শহরে
লুটে মাইনী- কি দিবে আর তারে;
হঠাৎ তাহার বাবা যায় আনিবে বলে
লজ্জায় পালায় বড্ড এক জঙ্গল আড়ালে।
সেদিন উঠিল শিরে–পাগলামি নেশা
খুন করে লুটে নিল না পেয়ে কোন দিশা।
খুঁজে পুলিশ খুঁজে সব যুবক তাকে
বাঁচার আর নেই উপায় এখন মরন ফাঁকে।
তাই, ক্ষীণ তনু নিয়ে আহসান ফিরে
ক্ষমা চাহিতে পিত্রের চরণে ধরে।
কি’বা দোষ তার, কিবা অপরাধ
নিষ্পাপ পুষ্প ছিল- বদমাসের লাগে আঘাত।
কাঁদিয়া পিতা ঝড়ঝড় ঝড়ে নীর
আপন সন্তান খোঁজে পেল রোগা তনু- পীর।
কাঁটিয়া দিবা-নামিল রজনী
উঠিল পাগলা নেশা! কি করিবে মা জননী?
আহসান চিৎকার করে—
পিতার পায়ে ধরে মাটি গড়াইয়া পরে।
পিতা বেসহ্য হয়ে- তাই রাক্ষুসে সেজে
আহসানকে নিয়ে যায় চোখ বোঁজে।
দাও নেশা- বলে যখন বাঁজিল মাদল ধ্বনি
হাতে বিষের বোতল নিয়ে এসে পিতা,
বুকে পাথর বেঁধে, নয়নে জ্বলে শিখা।
তনয় দেখে নীর পেলে তিক্ত সুখে ফিনসিডিল
মরন নেশা-ল হ জীবনের মুক্তি বিষ গিল।
আহসান ধরণী মায়া ছেড়ে দুঃখ-সুখে
মুক্তির জন্য করিল বিষ পান
পিতার হাতে বিষ পানে দিতে হল প্রাণ।
তাই, আজ মুক্তি সুখের উল্লাসে
পিতা কাঁদে লাশের পাশে বসে বসে।
( নেশার দ্বারে- বদ্ধ সিঁড়ি উপন্যাস সংলগ্ন )