কর্মপালনে করাল হৃদয়ে কোমল  
উষ্ণ স্পর্শে যেন হিম গলে জল  
তেমনি মহাদেব বিগিলত মনে
পরীক্ষিতে শিবানীরে বৃদ্ধের ছলনে
    মৃগচর্মে যষ্টিহস্তে আসিয়া বসিল তপোবনে ;
বৃদ্ধ চতুর বাককটুমধুর দীপ্ত আনন
জটামস্তকে যেন প্রজ্ঞাবৃদ্ধ মহাজন  
প্রশ্নবানে পার্বতীরে শীঘ্র করিতে নত
জিজ্ঞাসিল অবলীলায় কুটিল প্রশ্ন যত,  
        এতো রূপশী হইয়াও উদাসী কেন মনে?
কি পাইতে ইচ্ছা এই সুন্দর ভুবনে?
তনুদেহ প্রধান উপায় ধর্মের সাধনে
তৎপর কেন তবে দেহেরে ক্লেশ দানে ?
কি করিবে যজ্ঞেফল অমূল্য রতনে
যদি না রহে তনুদেহ সুখের ভুবনে?
              মানুষের রূপ নয় গুণই বড়ো ধন ,
ত্রিলোকে এমনি কহে সকল গুণীজনে
রূপলাগি নহে পাপী কিবা অজ্ঞানী
তোমারে দেখিয়া অদ্য এমত মানি
            তপস্যায় করিলে পবিত্র গিরিতপোবন।
তোমাসম রূপসী বুদ্ধিমতী নারী
অর্থ কাম বাসনার সন্ধান ছাড়ি
গিরিতপোবনে একেলা ধর্মের সন্ধানে
কঠোর সাধনা করিছে দেখিয়া মনে
         ধর্মই শ্রেষ্ঠ ত্রিবর্গে প্রতীতি হ্রিদয় পরে ,
এতো যবে মোরে করিয়াছ সমাদর
উচিত নয় তবে আমারে ভাবা পর
সপ্তবাক্য মিলিলেই হয় বন্ধুত্ব সাধুর
রাখ কেন  মোরে আর  করিয়া দূর,
           জন্ম তোমার স্বয়ং ব্রম্মা প্রজাপতির ঘরে ,
এতো রূপ লাবন্যা তুমি নবীনা কন্যা
ত্রিভুবনের রূপ তোমাতে শোভিয়া ধন্যা
লভিতে পার বিপুল  বিভব বিভূতি সকল
যদি চাহ তুমি একবার অপরূপা অনন্যা,  
         কিসের লাগি করিছ তপস্যা বল তুমি কন্যা ?
জন্ম তব প্রজাপতি ব্রম্মার বংশে
রূপ লাবণ্য জ্ঞান বুদ্ধি সর্বাংশে
ত্রিভুবনে তোমার নাহি  তুলনা
বল কন্যা কোন সে তীব্র বাসনা
            পুরাইতে করিছ এরূপ কঠোর সাধনা ?
যেই  নারীর হৃদয় আছে তেজাগ্নি
অপ্রিয় যদি কিছু নিয়তি দেয় আনি
প্রতিকারে  তীব্র প্রবৃত্তি হয় জানি
এমন অসম্ভব হে ক্ষীণদরশালিনী
          তব জীবনে ঘটিবে এমন অঘটন ঘটনা?
কেন বল দেখি সুন্দরী অনুপমা
অলংকার নারীর প্রাণ হইতে প্রিয়তমা  
তাহারে ত্যাজিয়া এমন নবীন বয়সে
বৃদ্ধার পরিধেয়ে হইয়া বল্কল বসনা
              কোন স্বর্গ তপস্যায় করিছ কামনা ?
সহি তপঃক্লেশ বৃথা স্বর্গের অণ্বেষ  
যবে পিতা তব স্বয়ং অধীশ্বর দেবভূমে
স্থিত যাহা গিরিদেশে স্বর্গ ধরিত্রীর
কিরীট সম নীলনভ সদা যারে  চুমে ,
         আছো কি তবে সমর্থ স্বামীরত্নের সন্ধানে ?
রূপে গুনে সুনয়না নাহি তব তুলনা
তুমি রত্ন শ্রেষ্ঠ মিথ্যা নহে ভাবনা  
কিন্তু সকলে রত্নেরে  খুঁজিয়া বেড়ায় ,  
রত্ন স্বয়ং কাহারেও খুজিতে যায়  
        শুনি নাই এমন মিলিবে খুজিলে বিশ্ব ভুবনে।
স্বামী শব্দ শুনিয়া পার্বতী  অভিলাসী
ফেলিছে দীর্ঘোশ্বাস দেখিয়া ছদ্দবেশী
কহে ,হইতেছে না সংশয় দূর মোর
তুমি প্রার্থনা করিবে হইয়া কাতর
            তবুও গলিবেনা কোনো পুরুষের মন  ?
অবিশাস্য ,ত্রিভুবনে করিয়া প্রার্থনা
এমন পুরুষ তোমার আজ মিলিবে না ,
আলতা বিনেই যার রঙ্গা চরণ দুখানি
উজ্জ্বল কপোলে সিঁদুর এখন পড়েনি ,
         সোহাগিনী নহে মহাভাগিনী কাহার প্রতারণ ?
সে কি নিজেরে ভাবে মহা রূপবান
রমণীয় নয়নে আকর্ষক মদনের সমান  
অহংকারে নিতান্তই একান্তমনা
আপনারে করে শুধু মিছে প্রবঞ্চনা
           বল অভীষ্ট কে যারে করিয়াছ মনোস্কাম ?
পাটল নয়না তপোকালে কজ্জলহীনা
লজ্জাবশে শিবনাম মুখেতে অনিলনা  
করি ভ্রমর কালো ভ্রুর নিপুন ভঙ্গি  
নিত্য-সহচরীরে শিব-প্রেমে-রঙ্গি
       নিঃশঙ্ক ইঙ্গিতে কহিলা বলিতে প্রিয়পাত্রের নাম।  
তপোব্রতসঙ্গী সেই মাত্র সহচরী
ছদ্দবেশী শিবেরে কহিলা শুদ্ধকরি,
ঐশর্যশালী দিকপাল মহাবলী রণে
পার্বতীর কভু  ইচ্ছা নাহি মনে
         তাদৃশ পতিত্বে কোনো কালে করিতে বরণ ,
যিনি রাখে কন্দর্পরে করিয়া শাসন
সৌন্দর্যগুনে কভু সেকি বশীভূত হন ?
মস্তকে জ্ঞানচন্দ্র প্রজ্ঞায় নত ত্রিনয়নপাশ
সেই মহাদেবে প্রিয়সখী নিত্য করে অভিলাষ
            শিবেরে সহচরী বলিল এতো করি মন।
ভাবিয়া দেখ যদি নিদাঘে পদ্মের অন্তর  
ছত্রকর্মে  রাখি তাহে রুধিতে সন্তাপ প্রখর,
তেমনি নিয়োজিয়া কোমল শরীর পার্বতী
অভিলাষ পূরণে হইয়াছে কঠিন তপোব্রতী ,
                  নবীন বয়সে কিশোরী রহিতে নারে ঘরে ,
মহাদেবের  প্রশান্ত স্থিতধী মন দুর্দ্ধর্ষ
কামদেব স্বয়ং আসিয়া হইলেন ভস্ম
স্পর্শিতে অপরাগ বান ব্যর্থ মদন
আঘাতিলো সখির হিয়াতে সঘন  ,
               নবীন হিয়া পড়িল গিয়া কঠিন মদন জ্বরে
তদাবধি সখি মোর মদনে সন্তাপিত ঘোর  
ললাটচন্দন লেপে কৃষ্ণ কেশর হইলো ধূসর
তদা পিতার ভবনে তুষার শিলায় করিযা শয়ন
হইলোনা শান্তি মদন সন্তপ্ত দেহ আর মন।
             শিব প্রেম পুজারিণী উমা লভিতে শংকর হরে।