তুমি এখনো সে চোখে ভোর উঠাও
সূর্য জাগিয়ে উষার হলদে আভা ছড়াও।
বিছানা ছেড়ে চুলগুলো বাঁধো
আয়নায় মুখখানা রাখ আধো।
মৃদু হাসি রাঙাও ঠোঁটজোড়া মেলে
সিথিতে সিঁদুর রাঙাও একটুখানি হেলে।
কত কি কর তুমি,বলো কি পেলে?
কোথায় আমি? আমি তো আজ নেই!
আজও তোমার ফাগুনী গতর সেই।
কপোতী পানে মায়া ছোঁড় আগের মতই
পুষ্করিণীতে দেহ ছোঁয়াও চুল ভেজাও
কটি তরুণ যুবকের হৃদয় নিয়ে যাও
কত কি কর তুমি, বল কি পাও?
কোথায় আমি? আমি তো আজ নেই!
আমি ছাড়াই দিব্যি আছো,হাঁটছো ঠিক দেখে বুঝে
খোঁপা বেঁধে ঠিক,লাল টকটকে জবা দাও গুঁজে।
দুপুর এলে নুপুর পায়ে চৌকাঠে ডান পা-টি রাখ
ফের কক্ষে এসে ও তনুর নীল শাড়িটায় সুগন্ধ মাখ।
গোধুলির লগ্নে এসে চা_কাপে রাঙা ঠোঁট দুটো ঐ
কত শত গপ্পো জমাও পাশে বসে সই।
কত কি কর তুমি বল,আমি কি কেউ নই?
কোথায় আমি? আমি তো আজ নেই!
সন্ধ্যে যখন জলদি নামে তোমায় হিংসে করে
লালপেড়ে শাড়ীখানা পরে প্রদীপ জ্বালো ঘরে।
যখন ঝোঁপের ঝিঁ-ঝিঁ পোকারা বিদঘুটে শব্দ ছড়ায়,
যখন বাঁশঝাড়ে জোনাকগুলো অনবরত আলো ফলায়;
ঠিক তুমি তখন বুত হও মোহিনী স্ব-রুপ জ্বালায়।
কত কি কর তুমি বলো,তাতে আমার কি বা এসে যায়
কোথায় আমি? আমি তো আজ নেই!
রাত ঘনিয়ে আসলে তখনও তুমি আগের মতই
দেবদাস-এর ভাঁজকরা পৃষ্ঠাটি খুলে চোখ বুলাও,
লক্ষী মেয়ের মত একাগ্রতা নিয়ে চরিত্রায়ন জাগাও।
কখনও হাসো,কখনও কাঁদো কত যে আবেগ দিয়ে
বই রেখে ঠায় ভাবতে থাক ইশ! হলই পারুর বিয়ে।
কত কি কর তুমি,বলো তুমি এতকিছু কর কি নিয়ে?
কোথায় আমি? আমি তো আজ নেই!
ক্লান্ত যৌবনরুপ হাঁফিয়ে যখন তোমায় ঘুম চেপে বসে
নির্বোধ প্রাণ গৃহমণি তুমি,ঘুমঘোরে স্বপ্নে বেড়াও চষে।
নিশুতি সময় হঠাৎ!জেগে উঠে বসে পরো হাঁটুর উপর চিবুক তুলি
চারকৌন দেয়াল ক্রমশ সরায়ে থমকে যাও,যেন কক্ষপথচ্যুত করাও গ্রহাণুগুলি।
কাল পরিক্রমা স্থবির করে দাও তোমার ডুকরে উঠা কান্নায়
কার জন্য হাহাকার!কার বুক শূন্যে মিলায়!কার নির্বাক অন্যায়!
কত কি কর তুমি বলো, এসব আমার বৃথা শব্দব্যয়,
কোথায় আমি?
আমি তো সেই আদ্যন্ত এক জ্বলজ্যান্ত নির্বোধ অসহায়।